মোস্তাক মোরশেদ হোসেন, রাঙ্গালিবাজনা: ওঁরা আশা করেছিলেন, কুমড়ো বেচে দু’পয়সা লাভের মুখ দেখবেন। তবে সে গুড়ে বালি। কুমড়ো চাষ করতে গিয়ে হাড়ে হাড়ে সমস্যা টের পাচ্ছেন মাদারিহাটের (Madarihat) ইসলামাবাদ (Islamabad) গ্রামের কৃষকরা। কুমড়োখেতে লাগাতার হানা দিচ্ছে হাতি (Elephant)। খেয়ে নিচ্ছে খেতে বেড়ে ওঠা কুমড়ো। পরিস্থিতি এমনই যে শেষপর্যন্ত নিয়তির কাছে হার মানছেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা।
এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত কুমড়োচাষি জফুর আলি নিজের পোষা গোরু লাগিয়ে খাইয়ে দিতে শুরু করেছেন কুমড়ো গাছগুলি। অথচ, এখনও গাছে প্রচুর ফল ধরে রয়েছে। ফুলও ধরেছে প্রচুর। জফুর বলেন, ‘ফলগুলিকে বড় করে লাভ হবে না। ইতিমধ্যেই হাতি ৩-৪ দিন হানা দিয়েছে কুমড়োখেতে। বেছে বেছে ভালো ভালো এবং বড় আকারের কুমড়োগুলি খাচ্ছে। ছোটগুলিকে রেখে যাচ্ছে। অর্থাৎ কয়েকদিন পর এসে এগুলিও খেয়ে যাবে। তাই গোরু দিয়ে গাছগুলি খাইয়ে দিচ্ছি। অন্ততপক্ষে ওদের পেট তো ভরবে।’
ওই গ্রামের গা ঘেঁষে রয়েছে খয়েরবাড়ি জঙ্গল। ওই জঙ্গলে আবার অন্যান্য জঙ্গল থেকে গিয়ে হাতির পাল ঘাঁটি গাড়ে। আবার কিছুদিন পর অন্যত্র পাড়ি দেয়। তবে দিন-দিন ঘন হচ্ছে সেই বন। তাই বেশ কয়েকটি হাতি এখন খয়েরবাড়ির স্থায়ী বাসিন্দা। ফলে এলাকায় বেড়েছে হাতির হানা। খয়েরবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের স্থানীয় সদস্য সাজু হোসেন বলছেন, ‘বছরভর হাতির হানায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষকরা।’ অবশ্য বন দপ্তরের মাদারিহাট রেঞ্জ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, হাতির হানা রুখতে রাতভর টহল দিচ্ছেন বনকর্মীরা।
আলুখেতে জমি চষাই থাকে। তাই আলু তোলা শুরু হওয়ার আগেই আলুখেতে কুমড়ো বীজ বপন করেন কৃষকরা। দ্রুত বেড়ে ওঠে কুমড়ো গাছ। আলু তোলার মরশুম শেষ হওয়ার এক মাসের মধ্যে কুমড়ো ফল বড় হতে শুরু করে। ভালো ফলন হলে ৩ বিঘা জমি থেকে এক টন পর্যন্ত কুমড়ো উৎপাদিত হয়। নির্দিষ্ট সময়ে সেই কুমড়ো বিক্রি করে ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত পাওয়া যেতে পারে। তবে ইসলামাবাদের কৃষকদের আশায় জল ঢেলে দিয়েছে খয়েরবাড়ি জঙ্গলের বুনোরা।
ক্ষতিগ্রস্ত কুমড়োচাষি মহম্মদ আবতারউদ্দিন সহ অনেকেই জানালেন, পাট চাষের চেয়ে কুমড়ো চাষ তুলনামূলকভাবে লাভজনক। আবার ঝক্কিও কম। অথচ হাতির উৎপাতে লাভ তো দূরের কথা লোকসানই হচ্ছে। প্রতি রাতেই হানা দিচ্ছে হাতি। তাই হতাশ হয়ে অনেকেই গোরুকে খাইয়ে দিচ্ছেন কুমড়ো গাছগুলি।