ঘোকসাডাঙ্গা ও নিশিগঞ্জ: মাথাভাঙ্গা–২ ব্লকের রুইডাঙ্গা ও নিশিগঞ্জে আজও অভিনব মেলায় এসে বন্ধুত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয় নয়া প্রজন্মের একাংশ। হাতে পানসুপারি নিয়ে খুঁজে নেন সখা অথবা সখী। ইন্টারনেটে ঘরে বসে মাউসের এক ক্লিকেই বা মুঠোফোনের মাধ্যমে এখন বন্ধু পাতানো সম্ভব। তবে কোচবিহারের রাজবংশী সম্প্রদায়ের তরুণ-তরুণীরা প্রাচীন লোক ঐতিহ্য ধরে রাখতে আজও তাঁদের বন্ধু খুঁজে নেন সখাসখীর মেলায়। সোমবার সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এই মেলা চলল মাথাভাঙ্গা–২ ব্লকের রুইডাঙ্গার দোলং নদীর পাড়ে নিশিগঞ্জ চড়কেরডাঙ্গা গ্রামে। প্রতি বছর অসংখ্য তরুণ-তরুণী বন্ধুর খোঁজে ভিড় জমান এই মেলায়।
মেলায় চতুর্ভুজ মূর্তির সামনে পুরোহিতের কাছে মন্ত্র পাঠ করে সখা অথবা সখী পাতানো হয়। চতুর্ভুজ মানে এখানে নারায়ণ। তাই গ্রামবাংলায় রাজবংশী সম্প্রদায়ের মধ্যে এই মেলা চতুর্ভুজের মেলা নামেও পরিচিত। মেলার কিছুদিন আগে লম্বা বাঁশের মাথায় নিশান মেলার মাঠে লাগিয়ে দেওয়া হয় প্রথা মেনে। তা দেখে স্থানীয় মানুষ জানতে পারেন মেলা আসছে। মেলায় নানা পসরার পাশাপাশি দোলায় চাপিয়ে নিয়ে আসা হয় চতুর্ভুজের মূর্তিকে। মেলা কমিটির সদস্য গণেশ দেব সিংহের কথায়, ‘রাজবংশী সমাজের বন্ধু পাতানোর মেলা বহু বছর ধরেই চলে আসছে। আমরা চেষ্টা করছি প্রায় হারিয়ে যেতে বসা এই ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে।’
মেলার বিগ্রহ চতুর্ভুজের পূজারি নলেশ্বর অধিকারী ও উপেন্দ্রনাথ অধিকারীদের কথায়, ‘এবছরও পানসুপারি হাতে নিয়ে দেবতার মূর্তির সামনে অঙ্গীকার করে প্রচুর তরুণ-তরুণী নিজেদের বন্ধুত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করেছেন। আর সেই বন্ধুত্বের টানেই প্রতিবছর অনেক মানুষ এই মেলায় আসেন। এছাড়া নতুনরাও আসেন বন্ধুত্বের খোঁজে।’
স্থানীয় শিক্ষক ও লোকসংস্কৃতির গবেষক সুভাষচন্দ্র রায় বলেন, ‘রাজবংশী সমাজের কৃষ্টি সংস্কৃতির একটি অঙ্গ এই সখাসখীর মেলা। শুধু বন্ধুত্বের জন্য মেলার আয়োজনের পরম্পরা আজও ধরে রেখেছে রুইডাঙ্গা ও নিশিগঞ্জের চড়কেরডাঙ্গা গ্রামের মানুষ।’ মেলায় আসা হরেকমাল ব্যবসায়ী তপন বর্মনের কথায়, ‘মেলায় ভিড় ছিল ভালো, ব্যবসাও ভালো হয়েছে।’ বিজয় বর্মনের কথায়, ‘মেলায় এসে নতুন বন্ধু পেয়েছি। গল্পগুজব, খাওয়াদাওয়া ও আড্ডা দিয়ে ভালো লাগছে।’ মেলা আয়োজক কমিটির পক্ষে তাপস দাস, সুভাষ দাসের কথায়, ‘প্রতিবছরের মতো এবছরও মেলায় ভালো সাড়া মিলেছে।’