পল্লব ঘোষ, আলিপুরদুয়ার: কে বলে শিক্ষক-পড়ুয়ার চিরকালীন সেই মধুর সম্পর্ক আজ তিক্ত! শনিবার আলিপুরদুয়ার (Alipurduar) শহর সেই হারিয়ে যেতে বসা মিষ্টিমধুর সম্পর্ককে নতুনভাবে খুঁজে পেল। কর্মজীবনের শেষদিন ঘোড়ার গাড়িতে করে বাড়ি ফিরবেন বলে ম্যাক উইলিয়াম হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলের (McWilliam HS School) প্রধান শিক্ষক সুধাংশু বিশ্বাস কোনও একদিন তাঁর পড়ুয়াদের (School Student) বলেছিলেন। কিন্তু সেই ইচ্ছে যে কোনওদিন পূর্ণ হবে তা ভাবতেও পারেননি।
শনিবার সবার হেডস্যরের (Head Teacher) কাজের শেষদিন ছিল। শারীরিকভাবে অনেকদিন ধরেই হাঁটাচলায় কষ্ট। প্রিয় পড়ুয়ারা যখন তাঁকে হাত ধরে স্কুলের বাইরে বের করে নিয়ে আসছে, অবাক করা কী তাঁর জন্য অপেক্ষা করছে তা তিনি ভাবতেও পারেননি।
ঘোড়ার গাড়িটিকে দেখে তিনি একেবারে হতবাক। চোখে জল। পড়ুয়ারাই তাঁকে সযত্নে গাড়িতে তুলে দেয়। তারপর সেই গাড়ি সহ ব্যান্ড সহযোগে শোভাযাত্রা কোর্ট মোড় হয়ে ফের স্কুলের সামনে এসে গোটা কর্মসূচির সমাপ্তি। দেখে দিলীপ সরকারের মতো বাসিন্দারা বললেন, ‘নাহঃ, ভালো অনেক কিছুই আজও শেষ হয়ে যায়নি।’ পড়য়াদের কীর্তি দেখে স্বপ্না সাহার মতো অভিভাবকরা আশ্বস্ত।
স্কুলের পড়ুয়া শুভম চৌধুরীর কথায়, ‘স্কুলের উন্নতির পাশাপাশি মাস্টারমশাইয়ের আমাদের প্রতিও সমান নজর ছিল। আমাদের যে কারও প্রয়োজনে তিনি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতেন।’ আর এই সূত্রেই রাজকীয় এক বিদায় সংবর্ধনার আয়োজন। স্কুলের মাস্টারমশাইদের কাছ থেকে চাঁদা তোলা তো ছিলই, পাশাপাশি ছিল নিজেদের হাতখরচার টাকা একত্র করাও। শিক্ষক অজয় মণ্ডল বললেন, ‘আমি যখন পড়ুয়া ছিলাম সুধাংশুবাবু আমার শিক্ষক ছিলেন। চাকরি করার সময় তিনি আমার সিনিয়ার। আজ একটা গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় শেষ হল।’
সবকিছু ভালোয় ভালোয় শেষ হওয়ার পরও সদ্য প্রাক্তন হওয়া মাস্টারমশাই যেন বিশ্বাসই করে উঠতে পারছিলেন না, ‘পড়ুয়ারা বাইরে নিয়ে গিয়ে যখন বলল, আমার জন্য ঘোড়ার গাড়ির ব্যবস্থা করা হয়েছে তখন রীতিমতো অবাক হয়ে যাই। তবে ওদের প্রস্তাব ফেলতে পারিনি। প্রধান শিক্ষক হিসেবে এই স্কুলকে সবার সেরা করার চেষ্টা করেছিলাম। আশা করছি, আমার অনুপস্থিতিতেও এই চেষ্টা জারি থাকবে।’