মোস্তাক মোরশেদ হোসেন, বীরপাড়া: আলিপুরদুয়ারের (Alipurduar) ভুটান সীমান্ত ঘেঁষা মাদারিহাট-বীরপাড়া ব্লক এখন ভোটের হাওয়ায় তেতে উঠেছে। প্রশ্ন উঠেছে, মাদারিহাটের (Madarihat) উন্নয়ন নিয়ে। পঞ্চায়েতের কাজগুলিকে তৃণমূলের উন্নয়ন হিসেবে প্রচার করছে শাসকদল। এখানেই ব্যাকফুটে বিজেপি (BJP)। আলিপুরদুয়ারের সাংসদ জন বারলা (John Barla) ও মাদারিহাটের বিধায়ক মনোজ টিগ্গা (Manoj Tigga) বিজেপির। মনোজ এবার আবার আলিপুরদুয়ার লোকসভা কেন্দ্রে প্রার্থী। কিন্তু গত পাঁচ বছরে এলাকার উন্নয়নে তাঁদের অবদান কী? তৃণমূলের ‘সৌজন্যে’ এই প্রশ্নটা মাদারিহাটের হাওয়ায় ভাসছে। বারলা, টিগ্গাদের একসুর, ইচ্ছে থাকলেও রাজ্য সরকারের অসহযোগিতায় অনেক কিছুই করা যায়নি।
মাদারিহাটবাসী ঝুলি উজাড় করে ভোট দিয়েছিলেন জন বারলা, মনোজ টিগ্গাদের। পরবর্তীতে বারলা মন্ত্রীও হন। রেলমন্ত্রক কেন্দ্রীয় সরকারের আওতায়। অথচ বীরপাড়ায় আরওবি তৈরি করা হয়নি। যানজটের গল্প রোজকার। প্রায় শ-তিনেক ডাম্পার, ট্রাকে করে প্রতিদিন ডলোমাইট আনা হয় দলগাঁও রেলস্টেশনে। সেখানে ডলোমাইট বোঝাই করা হয় ওয়াগনে। গোটা বীরপাড়ায় তাই ভাসে ডলোমাইটের গুঁড়ো। ওই সমস্যাগুলির সমাধান হয়নি কেন, জানতে চাইলেই দায় রাজ্য সরকারের ওপর চাপিয়ে দিয়েছেন বারলা-টিগ্গা। অবশ্য সম্প্রতি মাদারিহাটে কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেসের পরীক্ষামূলক স্টপ চালু করা হয়েছে।
তৃণমূলও কেন্দ্রীয় সরকারের ওপর তোপ দেগে নিজেদের দায় এড়িয়ে গিয়েছে। রাঙ্গালিবাজনা, খয়েরবাড়িতে নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত ৭-৮টি গ্রাম। এলাকায় তৃণমূলের প্রচার, কেন্দ্রীয় সরকার ১০০ দিনের কাজের প্রকল্প বন্ধ করে রাখায় পঞ্চায়েত পাড়ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নিতে পারছে না। দলের ব্লক সভাপতি জয়প্রকাশ টোপ্পো বলছেন, ‘বিধায়ক, সাংসদ নদীভাঙন রোধে কোনও পদক্ষেপই করেননি।’ মনোজের পালটা দাবি, ‘১০০ দিনের কাজের হিসেব না দেওয়ায় কাজ বন্ধ করে রাখা হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের নাম পরিবর্তন করে নিজেদের নামে চালাচ্ছে রাজ্য সরকার।’
গোদের ওপর বিষফোড়া বান্দাপানি গ্রাম পঞ্চায়েত। সাংসদ হয়ে বারলা দত্তক নেন গ্রামটি। বলেছিলেন, ‘এই গ্রামের ভালোমন্দ দেখা এখন আমার দায়িত্ব।’ ব্যাস, দায়িত্ব শেষ! শেষ কবে গ্রামে পা রেখেছিলেন বারলা, মনে করতে পারছেন না কেউই। করোনাকালে ত্রাণ নিয়ে বান্দাপানিতে ঢুকতে গিয়ে পুলিশের বাধায় ফিরে যান বারলা। তারপর ২০২২ সালের ২১ অগাস্ট বান্দাপানি গ্রাম পঞ্চায়েতের গারুচিরায় অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবার সূচনা করেছিলেন। কিন্তু পা দেননি বান্দাপানি চা বাগানে।
বান্দাপানির একটা অংশের আজও ভরসা ভুটানের ঝরনার জল। সুমন তামাং বলছিলেন, ‘উনি দত্তক নিলেন। কিন্তু কোনও কাজ করলেন না।’ বান্দাপানিতে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দপ্তর এতদিনে ২টি পানীয় জলপ্রকল্প তৈরির কাজ শুরু করেছে। বীরপাড়া থেকে বান্দাপানি যেতে পেরোতে হয় সেতুবিহীন বীরবিটি, ডিমডিমা, ধুমচিখোলা নদী। জানা গিয়েছে, সাংসদ হওয়ার পর কেন্দ্রীয় সরকারের টাকায় ডিমডিমায় সেতু তৈরিতে পদক্ষেপ করেন বারলা। প্রস্তাবও পাঠানো হয় রাজ্য সরকারের কাছে। সেই প্রস্তাবের ফাইল বোধহয় হারিয়ে গিয়েছে, তাই সেতু তৈরি হয়নি, বললেন বাসিন্দারা।