মোস্তাক মোরশেদ হোসেন, বীরপাড়া: যৌবনকালটা সংসারকে উজাড় করে দিয়েও শেষযাত্রায় সন্তানের হাতে মুখাগ্নি জুটল না শ্রেয়ার। বৃদ্ধার নাকি ৪ ছেলে রয়েছে। তবে বাড়ি থেকে হারিয়ে গিয়েছেন তিনি। স্বামী, ছেলেপুলের নামঠিকানাও মনে নেই। ওই বৃদ্ধা সনাতন ধর্মাবলম্বী। এদিকে, তাঁকে যিনি চার বছর ধরে দেখভাল করছিলেন, তিনি ইসলাম ধর্মাবলম্বী। শ্রেয়াদেবীকে ‘মা’ বলে ডাকতেন তিনি। হোক না পাতানো মা, মায়ের মৃত্যুতে মুখাগ্নি করা তো ছেলেরই কর্তব্য। সাজু তালুকদারও সেটাই করলেন। মন্ত্রোচ্চারণ করলেন পুরোহিত। শ্রেয়ার মুখাগ্নি করলেন সাজু।
৪ বছর আগে শ্রেয়াদেবীকে সাজু তালুকদারের জিম্মায় দেয় পুণ্ডিবাড়ি থানার পুলিশ (Pundibari Police Station)। এরপর থেকে আলিপুরদুয়ারের (Alipurduar) ডিমডিমায় (Dimdima) হেভেন শেলটার হোমে ছিলেন তিনি। অনেক জিজ্ঞাসাবাদ করার পরও শ্রেয়ার বাড়ির ঠিকানা জানতে পারেননি কেউ। শুধু এটুকুই বোঝা গিয়েছিল, তাঁর বাড়ি বিহারে। তবে ওই বৃদ্ধা জানিয়েছিলেন, ঘরে তাঁর ৪ জন ছেলে রয়েছে। ২ মেয়ে বিবাহিতা। শনিবার রাতে হঠাৎই অসুস্থ হয়ে মারা যান ষাটোর্ধ্ব শ্রেয়া। রবিবার ধূপগুড়ির মহাশ্মশানে তাঁর মুখাগ্নি করেন হোমের কর্ণধার সাজু। সঙ্গে ছিলেন হোমের আবাসিক মনোজ গুপ্তা, কৃষ্ণা দাস, গোপাল প্রধানরা।
পেশায় গাড়িচালক সাজু গরিবদের কাপড়চোপড় বিলি করতে করতে একসময় শেলটার হোমই খুলে বসেছেন। এখন সেখানে মহিলা আবাসিক রয়েছেন ২২ জন। পুরুষ ১০ জন। এঁদের একটা বড় অংশই মানসিক ভারসাম্যহীন। ঠিকানা ভুলে গিয়েছেন ওঁরা। আবার অনেকেই সন্তানের হাতে লাঞ্ছিত, বিতাড়িত হয়ে ঘরে ফিরতে নারাজ। শেলটার হোমটাই এখন ওদের ঘরবাড়ি। দিনভর উমাদেবী, বারুণী চৌধুরীদের সঙ্গে সংসারের কথা গল্প করতেন শ্রেয়া। বলতেন, ছেলেদের কথা বড্ড মন পড়ছে। তবে বাড়িটা কোথায়, ছেলেদের নাম কী, কিছুতেই মনে করতে পারেননি।
শেলটার হোমের দু’-একজন করে আবাসিক মাঝে মাঝেই ইহলোকের মায়া ত্যাগ করেন। দেহ নিয়ে কখনও কবরস্থানে, কখনও শ্মশানে ছুটতে হয় সাজুকে। এর আগে কুমোদেবী, কমলা মজুমদারদের মুখাগ্নি করেছেন সাজু। তাঁর কথায়, ‘বাড়িতে থাকলে ওদের ছেলেরাই মুখাগ্নি করতেন। এখানে আমিই ছেলে। তাই সন্তানের কর্তব্যটুকুই পালন করেছি। এছাড়া আর কিছু নয়।’