রাজু সাহা, শামুকতলা: সায়নের বাবা-মা দুজনে মিলে ছোট্ট চায়ের দোকান চালান। যা আয় হয়, তা দিয়ে কোনওমতে সংসার চলে। অভাব নিত্যসঙ্গী। তবে দারিদ্র্যই হোক বা শারীরিক প্রতিবন্ধকতা, সব প্রতিকূলতা জয় করেই পরিবারের নাম উজ্জ্বল করল বিশেষভাবে সক্ষম সায়ন দত্ত। আলিপুরদুয়ার-২ (Alipurduar) ব্লকের দক্ষিণ মজিদখানার (Majidkhana) সায়ন রীতিমতো নজরকাড়া রেজাল্ট করেছে। মাধ্যমিক পরীক্ষায় (Madhyamik Result 2024) মোট ৬২১ পেয়েছে সায়ন।
বিভিন্ন বিষয়ে তার প্রাপ্ত নম্বর হল- বাংলায় ৯৫, ইংরেজিতে ৮২, অঙ্কে ৮৭, জীবনবিজ্ঞানে ৯২, ভৌতবিজ্ঞানে ৮৩, ইতিহাসে ৯০ এবং ভূগোলে ৯২। মজিদখানা স্কুলের ছাত্র সায়ন বিজ্ঞান নিয়ে পড়ে ভবিষ্যতে চিকিৎসক হতে চায়।
জন্ম থেকেই বিশেষভাবে সক্ষম সায়ন। তার পায়ে সমস্যা রয়েছে। শারীরিক উচ্চতাও কম। শামুকতলা রোড রেলস্টেশনের পাশে লেভেল ক্রসিং পার হয়ে ভাটিবাড়ির দিকে যাওয়ার সময় টোটোপাড়া-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের উলটো দিকে মাটির একচালা টিনের ঘরের সামনেই তাদের সেই চায়ের দোকান। বাবা-মা দোকান চালান। দোকানের কাজে বাবা-মাকে সাহায্য করতে হয় সায়নকেও। মাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রস্তুতির মাঝেই নিয়মিত দোকানের কাজ করতে হয়েছে। এমন আর্থিক অনটনের মধ্যে কী করে ছেলেকে উচ্চশিক্ষা দেবেন তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন সায়নের বাবা নকুল দত্ত এবং মা রিনা দত্ত।
নকুলরা জানান, বিশেষভাবে সক্ষম হওয়ায় সায়নের প্রতি বাড়তি নজর দেওয়া প্রয়োজন। কিন্তু জীবনযুদ্ধে শামিল হয়ে তাঁরা যে সেভাবে সায়নের প্রতি নজর দিতে পারেননি, মানছেন সেটাও। বাবা নকুল বলেন, ‘খুবই কষ্ট করে পড়াশোনা করেছে ছেলেটা। ভবিষ্যতে ওর চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন রয়েছে। আমাদের মতো দরিদ্র পরিবারের ছেলের সে স্বপ্ন কীভাবে পূরণ হবে তা ঈশ্বরই জানেন।’
তবে পরিবারের পাশাপাশি মজিদখানা স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারাও সায়নের এই রেজাল্টে ভীষণ খুশি। তাঁদের আশ্বাস, সায়নের পড়াশোনায় যাতে কোনও অসুবিধা না হয় অবশ্যই সেটা তাঁরা দেখবেন। মজিদখানা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক অভিজিৎ দেবনাথের কথায়, ‘শারীরিক প্রতিবন্ধকতা এবং আর্থিক অনটনকে জয় করে সায়ন যে রেজাল্ট করেছে, তা নিয়ে আমরা গর্বিত। ওর উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে যাতে কোনও সমস্যা না হয় সে ব্যাপারে আমরা সবসময় পাশে থাকব।’