অভিজিৎ ঘোষ, আলিপুরদুয়ার: রবিবারের কয়েক মিনিটের ঝড় (Alipurduar storm)। আর সেই ঝড়েই তছনছ হয়েছে আলিপুরদুয়ার (Alipurduar) জেলার বিভিন্ন জায়গা। বিশেষ করে আলিপুরদুয়ার-১ ব্লক এবং কুমারগ্রাম ব্লক। কুমারগ্রামে (Kumargram) যদিও ঝড়ের থেকে বেশি ক্ষতি হয়েছে শিলাবৃষ্টিতে। দুই ব্লকে সব মিলিয়ে ক্ষতির অঙ্ক ১০ কোটি টাকার বেশি। জেলা প্রশাসনের তরফে শুধু বাড়ি ভাঙার হিসেব করা হলেও ঝড়ে নষ্ট হয়েছে প্রচুর গাছ এবং সরকারি সম্পত্তিও। সেগুলোর সঠিক হিসেব এখনও করে উঠতে পারেনি জেলা প্রশাসন।
তবে প্রাথমিক ধারণা অনুযায়ী, ১০ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে যে বাড়িগুলোর বেশি ক্ষতি হয়েছে সেটার জন্য প্রায় দেড় কোটি টাকার সম্পত্তি নষ্ট হয়েছে। আংশিক বাড়ির ক্ষতি মিলে সেই হিসেব প্রায় ৪ কোটি টাকা। এছাড়াও আসবাবপত্র ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১ কোটির।
আলিপুরদুয়ার-১ এর বিডিও জয়ন্ত রায়ের বক্তব্য, ‘এই ব্লকে ৯৪টি বাড়ি পুরো ক্ষতি হয়েছে এবং ৩০০ বাড়ির আংশিক ক্ষতি হয়েছে। কত টাকার ক্ষতি হয়েছে সেই হিসেব আমরা করিনি। যাঁদের ক্ষতি হয়েছে তাঁদের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন নথি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে পাঠানো হয়েছে।’
অন্যদিকে, কুমারগ্রামের বিডিও গৌতম বর্মন বললেন, ‘শিলাবৃষ্টিতে এই ব্লকে প্রচুর বাড়ির ক্ষতি হয়েছে। সঠিক হিসেব না করা গেলেও প্রায় ৭০০ বাড়ির আংশিক ক্ষতি হয়েছে। আরও কিছু বাড়ি রয়েছে। ব্লক প্রশাসন ইতিমধ্যেই ১৩০০ জনের বেশি বাসিন্দাকে ত্রিপল দিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের প্রয়োজনীয় নথি নেওয়া হয়েছে। দুই ব্লকে প্রচুর গাছ নষ্ট হয়েছে। এখনও বিভিন্ন জায়গায় গাছ পড়ে রয়েছে। বেশিরভাগ গাছই ব্যক্তিগত মালিকানাধীন। স্থানীয় বাসিন্দারা নিজেরাই গাছগুলো কাটছেন।’
অন্যদিকে, সরকারি সম্পত্তি নষ্ট হওয়ার তালিকায় প্রথমেই রয়েছে বিদ্যুতের খুঁটি। জেলার বিভিন্ন জায়গায় প্রচুর বিদ্যুতের খুঁটি বদলেছে। জেলা প্রশাসন থেকে বলা হচ্ছে জেলায় বিদ্যুৎ পরিষেবা স্বাভাবিক রয়েছে। তবে বুধবারও আলিপুরদুয়ার-১ ব্লকের ঘরঘরিয়া, ছয় মাইল এলাকায় দেখা যায় বিদ্যুৎকর্মীদের কাজ করতে।
পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানির আলিপুরদুয়ারের রিজিওনাল ম্যানেজার গোবিন্দ তালুকদার এদিন বলেন, ‘বেশিরভাগ জায়গাতেই বিদ্যুৎ পরিষেবা স্বাভাবিক করা গিয়েছে। এখনও পর্যন্ত প্রায় ৭০টি খুঁটি বদলাতে হয়েছে। প্রচুর তারও বদল করতে হয়েছে।’
জেলায় প্রচুর ফসলও নষ্ট হয়েছে। অন্য ফসল নষ্ট না হলেও বেশি ক্ষতি হয়েছে ভুট্টার। জেলা কৃষি দপ্তর সূত্রে খবর, আলিপুরদুয়ার-১ ব্লকেই বেশি ভুট্টাখেত নষ্ট হয়েছে। বুধবার সেই ভুট্টাখেত পরিদর্শনে আসেন জেলার তিন সহকৃষি অধিকর্তা শান্তনু রায়, অম্লান ভট্টাচার্য, অরিন্দম ভট্টাচার্য। জেলার উপকৃষি অধিকর্তা নিখিল মণ্ডলের কথায়, ‘আলিপুরদুয়ার-১ ব্লকে প্রায় ৪০ হেক্টর ভুট্টা ক্ষতি হয়েছে। মোট ক্ষতি প্রায় ৪৬ লক্ষ টাকার।’
একদিকে লাভক্ষতির হিসেব যখন চলছে তখন ঝড়কবলিত এলাকা কিন্তু এখনও স্বাভাবিক হয়ে উঠতে পারেনি। আরও কয়েকদিন লেগে যাবে সেটা স্বাভাবিক হতে। এদিন আলিপুরদুয়ার-১ ব্লকের ছয় মাইল এলাকায় গিয়ে দেখা গেল অনেকেই ঘর সংস্কার শুরু করেছে। তবে অনেকেই এখনও ঘর সংস্কার শুরু করতে পারেনি। অনেকের ঘরের উপর গাছ পড়ে আছে।