অভিজিৎ ঘোষ, আলিপুরদুয়ার: পঞ্চায়েত নির্বাচন ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের সমস্ত জন প্রতিনিধিদের ক্ষমতা খর্ব হয়েছে। নতুন করে যে জনপ্রতিনিধিরা নির্বাচিত হয়েছেন বিভিন্ন বোর্ড গঠন না হওয়া পর্যন্ত তারাও আপাতত ঠুঁটো জগন্নাথ। এই পরিস্থিতিতে গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলা পরিষদের কাজের ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে। এই সমস্যা নজরে আসছে আলিপুরদুয়ার জেলা পরিষদের ক্ষেত্রেও। নতুন বোর্ড তৈরি না হওয়া পর্যন্ত জেলা পরিষদ কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। জেলা পরিষদ থেকে ছোট কাজ করা হলেও বোর্ড না থাকায় বড় কাজ নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া যাচ্ছে না।
ভরা বর্ষার মরশুমেব ভাঙন রোধের কাজ নিয়েই হোক বা বেহাল রাস্তা-এলাকাবাসী নানা সুপারিশ নিয়ে সদ্যনির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের দ্বারস্থ হচ্ছেন। কিন্তু বোর্ড গঠিত না হলে সেসব কিছুই কার্যকর করা যাচ্ছে না। কেবল রুটিন কাজই চলছে। জেলা পরিষদের অফিসে ঢুঁ মেরে দেখা গেল, সমস্ত আধিকারিকরা জেলা পরিষদ অফিসে আসছেন ঠিকই, তবে জেলা পরিষদের বিদায়ি বোর্ডের সদস্যদের খুব একটা দেখা মিলছে না। যদিও বিদায়ি সভাধিপতি শীলা দাস সরকারকে তাঁর নিজের অফিসে দেখা গিয়েছে। তবে বোর্ডের হাতে ক্ষমতা না থাকায় যে সমস্যা হচ্ছে সেটা মানছেন তিনিও। তাঁর কথায়, ‘আগে থেকে জেলা পরিষদের যে কাজগুলি শুরু হয়েছিল, সেগুলি চলছে। নতুন করে কোনও কাজ করা যাবে না। আমরা কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারব না এই সময়। অধিকারিকরা প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।’
২০১৮ সালের ১০ নভেম্বর জেলা পরিষদের বোর্ড গঠন করেছিল তৃণমূল। ১৭ জনের জেলা পরিষদ সদস্য নিয়ে বিদায়ি বোর্ড ছিল ঘাসফুল শিবিরের। এবছর জেলা পরিষদ বিরোধীশূন্য করেছে রাজ্যের শাসকদল। ইতিমধ্যেই জোর জল্পনা শুরু হয়েছে জেলা পরিষদের সভাধিপতি, সহকারী সভাধিপতির পদ নিয়ে। জেলা পঞ্চায়েত ও গ্রামীণ উন্নয়ন আধিকারিক (ডিপিআরডিও) অনুসূয়া ভট্টাচার্য জানান, ১ অগাস্ট থেকে বোর্ড গঠনের নোটিশ দেওয়া শুরু হবে। ১৬ অগাস্টের মধ্যে জেলায় পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদের বোর্ড গঠনের কাজ সেরে ফেলা হবে। তবে কবে কোন গ্রাম পঞ্চায়েতের বোর্ড বা পঞ্চায়েত সমিতির বোর্ড গঠিত হবে, সেসব তিনি বলতে পারেননি।
জেলা পরিষদের বিভিন্ন কাজ মুখ থুবড়ে পড়েছে। প্রতিবছরই বর্ষার সময় জেলা পরিষদ থেকে বিভিন্ন কাজ করা হয়। কোথাও দ্রুত রাস্তা, কালভার্ট, বাঁধ প্রয়োজন হলে জেলা পরিষদের সদস্যরা বৈঠক করে জরুরি ভিত্তিতে সেই কাজগুলি করেন। সেটা এবছর করা যাচ্ছে না। জেলা পরিষদের এক অধিকারিক বলেন, ‘জরুরি ভিত্তিতে যে কাজ করা দরকার সেটার এখন শুধু তালিকা করা যেতে পারে। বোর্ড হলেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে কোনটা আগে করা হবে। বিভিন্ন দপ্তর, রাজ্য বা কেন্দ্রীয় সরকার কোনও রিপোর্ট চেয়ে পাঠালে সেটা আমরা করে দিচ্ছি।’ নতুন বোর্ড গঠন হয়ে কবে আবার জেলা পরিষদের সব কাজ স্বাভাবিক হবে সেটাই এখন দেখার।