উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্কঃ মোহনবাগানের বিরুদ্ধে এএফসি কাপের প্লে-অফে ম্যাচ খেলে সবে ড্রেসিং রুমে ঢুকেছেন হায়দরাবাদ এফসি-র সেন্টার ব্যাক ফুটবলার চিংলেনসানা সিংহ। তিনি জাতিগত দাঙ্গায় উত্তপ্ত মণিপুরের খেলোয়াড়। মোবাইল ফোনটা হাতে নিয়েই দেখলেন অজস্র মিসড কল আর হাজারও ম্যাসেজ। ম্যাসেজ পড়েই মাথায় হাত মণিপুরের ফুটবলার চিংলেনসানার। মণিপুরের হিংসায় তিনি যে সব হারিয়ে ফেলেছেন। পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে তাঁর বাড়ি ঘর।
গত প্রায় তিন মাস ধরে উত্তপ্ত মণিপুর। হিংসার আগুন জ্বলছে অলিতে গলিতে। হিংসায় বলি হয়েছে শতাধিক। মণিপুরের চুরাচাঁদপুরের বাসিন্দা চিংলেনসানা। তিনি জানতে পারেন মণিপুরে তাঁর বসত বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে দুষ্কৃতীরা। বহু চেষ্টার পর ২৭ বছরের চিংলেনসানা তাঁর মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। সেই সময় বন্দুকের গুলির আওয়াজ শুনতে পেয়েছিলেন হায়দরাবাদ এফসি-র এই সেন্টার ব্যাক। দ্রুত সিদ্ধান্ত নেন মা-বাবার কাছে যাবেন। একটুও দেরি করতে চাননি। তাঁর বাড়ি, গ্রাম, তরুণ ফুটবলারদের তৈরি করার স্বপ্ন শেষ হয়ে গিয়েছে। শুধু পরিবার বেঁচে রয়েছে।
সর্বভারতীয় এক সংবাদ সংস্থাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “আমার সব কিছু চলে গিয়েছে। মণিপুরের হিংসা আমাদের সব কেড়ে নিয়েছে। আমাদের বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। চুরাচাঁদপুরে আমি একটা ফুটবল মাঠ বানিয়েছিলাম, সেটাও পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আমাদের যা ছিল সব কিছু চলে গিয়েছে। ভাল লাগছে না। ছোটদের ফুটবল খেলার জন্য জায়গাটা তৈরি করেছিলাম। সেটা শেষ করে দিল। আমার পরিবার কোনও মতে সেখান থেকে পালিয়েছে। কোনও এক ত্রাণ শিবিরে আছে ওরা।”
চিংলেনসানা আরও বলেন, “আমি সব সময় চেয়েছি চুরাচাঁদপুরের তরুণ প্রতিভাদের একটা জমি তৈরি করে দিতে। সেখানে তারা নিজেদের মেলে ধরতে পারবে। তাদের পক্ষে সম্ভব নয়, কোনও ফুটবল স্কুলে ভর্তি হওয়া। আমি তাই সেই জায়গাটা তৈরি করতে চেয়েছিলাম। কেউ যদি পেশাদার ফুটবলার হতে চায়, তাকে সেই জায়গাটা করে দিতে চেয়েছিলাম। আগামী দিনে তারা হয়তো ভারতীয় দলের হয়ে খেলতে পারত। দেশের সেরা ফুটবলার হয়ে উঠতে পারত। কিন্তু এই ঘটনায় সব শেষ। আমার থেকে সব কিছু কেড়ে নেওয়া হয়েছে। তবে আমি চাইব নতুন করে শুরু করতে।”
দল থেকে ছুটি নিয়েই মণিপুর ফিরে গিয়েছেন চিংলেনসানা। সেই পরিবারকে পাশে পেয়ে কিছুটা নিশ্চিন্ত তিনি। তিনি চান, এই হিংসা বন্ধ হোক, নতুন করে সব কিছু শুরু করতে চান তিনি।