শিলিগুড়ি: কেউ টিকিটের লাইনে দাঁড়িয়ে ক্রমাগত হাঁচি দিয়ে যাচ্ছেন, নাক ঝাড়তে ঝাড়তে অনেেকই আবার রুমাল ভিজিয়ে ফেলেছেন। কিন্তু প্রতিবাদ করছেন না কেউই। কেননা, তাঁদেরও পরিস্থিতিও একই। প্রত্যেকেই জ্বর-সর্দি-কাশিতে (Fever-cold-cough) আক্রান্ত। হঠাৎ জাঁকিয়ে শীতের জন্য যে এমন পরিস্থিতি, বলছেন চিকিৎসকরা। ‘গোদের ওপর বিষফোড়া’ হয়ে দাঁড়িয়েছে দূষণ। শীত-কুয়াশার দাপটে মাত্রাতিরিক্ত দূষণে (Pollution) শ্বাসকষ্টে কার্যত নাজেহাল শহরবাসী। যার জন্য সরকারি হাসপাতাল (Government Hospital) তো বটেই, চিকিৎসকদের প্রাইভেট চেম্বারেও নেহাত রোগীর ভিড়টা কম হচ্ছে না। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে আবহাওয়ার পরিবর্তন ঘটবে কবে, জানতে চাইছেন খোদ চিকিৎসকরাই। কষ্ট থেকে রেহাই পেতে তাঁরা দিচ্ছেন বিশেষ টিপস বা পরামর্শ।
বৃহস্পতিবার সকাল ৭টা নাগাদ শিলিগুড়ির এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স ছিল ২.৫ পিএম (পার্টিকুলার ম্যাটার) প্রতি বর্গ কিউবিকে ২৯৮.৮। রাত ৭টায় ২৮৪.২। অর্থাৎ, দিন এবং রাতের মধ্যে দূষণের ক্ষেত্রে তেমন কোনও পার্থক্য নেই। শীতের প্রকোপে বায়ুস্তর নেমে যাওয়ায় দূষণ মাত্রার ক্ষেত্রে যে তেমন পরিবর্তন ঘটছে না, বলছেন আবহবিদরা। কিন্তু এর ফলে যে সূক্ষ্ম কিছু ধাতব পদার্থ মানুষের ফুসফুসে বাসা বেধে তাঁকে বিপদের মুখে ফেলে দিচ্ছে, টের পাচ্ছেন চিকিৎসকরা। এমন পরিস্থিতিতে সাতসকালে বা রাতে বাড়ির বাইরে না যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন অধিকাংশ চিকিৎসক। বিশিষ্ট চেস্ট স্পেশালিস্ট তপন দাস বৈরাগ্যের কথায়, ‘অত্যন্ত প্রয়োজনে বাইরে বের হতে হলে মাস্ক ব্যবহার খুবই দরকার। নাহলে ফুসফুসের ক্ষতি হতে পারে।’ করোনাকালে মাস্ক ব্যবহারের জন্য শ্বাসকষ্টে (shortness of breath) আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা অনেকটাই কম ছিল বলে তাঁর বক্তব্য।
দূষণের জন্য যেমন বেড়েছে শ্বাসকষ্ট, তেমনই জাঁকিয়ে শীত পড়ায় জ্বর-সর্দি-কাশিতে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকরা। মূলত বয়স্ক এবং শিশুরা বেশি সমস্যায় পড়ছেন। অনেক রোগীর ক্ষেত্রেই অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ শ্রেয়সী সেন বলছেন, ‘সর্দিকাশি দেখা দিলেও সাধারণত এই সময় জ্বর দেখা যায় না। কিন্তু এবছর জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা অনেকটাই বেড়েছে। তাই শিশুদের প্রতি নজর দেওয়া প্রয়োজন।’ হঠাৎ ঠান্ডার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় এবং খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তনে অনেকেই পেটের রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন বলেও জানাচ্ছেন চিকিৎসকরা। শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ সঞ্জিতকুমার তেওয়ারি বলছেন, ‘জ্বর-সর্দি-কাশি তো রয়েইছে, সঙ্গে অনেক শিশুই পেটের রোগে আক্রান্ত হয়ে বমি করছে। তাই এসময় শিশুদের সাবধানে রাখা উচিত।’