নয়াদিল্লি: অনুব্রত মণ্ডলের ‘শনির দশা’ অব্যাহত। মঙ্গলবার রাজধানী দিল্লির দু-দুটি আদালতে দিনভর আইনি মারপ্যাঁচ কষেও শেষরক্ষা হল না। দিল্লি হাইকোর্ট বা রাউজ এভিনিউ, কোনও আদালতেই জামিন পেলেন না গরু পাচার কাণ্ডের অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত ও বীরভূমের তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। অগত্যা তিহারেই থাকতে হচ্ছে তাকে। উল্লেখ্য গতকাল একই রকম আইনি প্রচেষ্টা চালিয়ে ছিলেন অনুব্রতের মেয়ে সুকন্যা মণ্ডলও। দিল্লির নগর দায়রা আদালতে নিজেকে ‘দেউলিয়া’ প্রতিপন্ন করেও লাভ হয়নি, অন্তর্বর্তী জামিনের আর্জি নাকচ হয় অনুব্রত কন্যার। অর্থাৎ পিতা-পুত্রী দুজনকেই এখনও থাকতে হবে দিল্লির কুখ্যাত তিহার জেলেই।
সূত্রের দাবি, দিল্লি হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে এদিন অনুব্রতর আইনজীবীদের দায়ের করা ‘হেবিয়াস কর্পাস’ আর্জি মান্যতা পায়নি৷ দিল্লির রাউজ এভিনিউ কোর্টের নির্দেশেই যখন অনুব্রত মণ্ডল তিহার জেলে বন্দি, তখন হেবিয়াস কর্পাস মামলার যৌক্তিকতা কোথায়? মঙ্গলবার অনুব্রত মণ্ডলের আইনজীবী মুদিত জৈনকে প্রশ্ন করেন দুই বিচারপতি সিদ্ধার্থ মৃদুল এবং গৌরাঙ্গ কান্ত৷ আইনি যুক্তির মাধ্যমে বিচারপতিদের সন্তুষ্ট না করতে পেরে পেরে শেষমেশ মামলাটি প্রত্যাহার করে নেন আইনজীবী মুদিত জৈন৷ এরপর দিল্লি হাইকোর্টেরই সিঙ্গল জাজ বেঞ্চে বিচারপতি দীনেশ কুমার শর্মার এজলাসে ছিল অনুব্রত মণ্ডলের জামিনের আবেদনের শুনানি৷ এদিন সেখানেও আশাহত হয়েছেন তিনি৷
এদিন অনুব্রতর তরফে সওয়াল করতে গিয়ে বর্ষীয়ান আইনজীবী নরেন্দ্র হুডা আসানসোল জেলে বন্দি অনুব্রত মণ্ডলকে গ্রেপ্তারের ২৪ ঘন্টার মধ্যেই তাকে নিকটবর্তী আদালতে পেশ করা হয়নি বলে অভিযোগ করেন৷ এর পাল্টা যুক্তি দিয়ে ইডির আইনজীবী এস ভি রাজুর দাবি, ‘প্রিভেনশন অফ মানি লন্ডারিং’ আইনের কোথাও বলা নেই যে অভিযুক্তকে গ্রেপ্তারের ২৪ ঘন্টার মধ্যে তাকে সশরীরে আদালতে হাজির করতে হবে৷ অভিযুক্তকে কনস্ট্রাকটিভ ভাবেও হাজির করা যেতে পারত৷ ইডি তাই করেছে। সিবিআই মামলার অভিযুক্ত রূপে আসানসোল জেলে বন্দি থাকাকালীন কেন তাকে গ্রেপ্তার করেছিল ইডি, দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতি দীনেশ কুমার শর্মার এই প্রশ্নের উত্তরে ইডির আইনজীবী, অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল এস ভি রাজু দাবি করেন, আসানসোল জেলে তাকে গ্রেপ্তার না করলে অনুব্রত মণ্ডল সিবিআই মামলায় জামিন পেয়ে যেতে পারেন৷ এই মর্মেই রাজুর যুক্তি, ‘কোন অভিযুক্তকে কখন গ্রেপ্তার করবে তদন্তকারী সংস্থা সেটা সম্পূর্ণভাবে তাদের এক্তিয়ারভুক্ত বিষয়৷ এখানে আদালত কিছু বলতে পারে না৷ তারপরেও বলতে চাই অনুব্রত মণ্ডলকে হেপাজতে নেওয়া প্রয়োজন ছিল৷ নাহলে তিনি জামিন পেয়ে যেতেন।’ উভয় পক্ষের বক্তব্য শোনার পরে বিচারপতি দীনেশ কুমার শর্মা তাদের লিখিত অভিমত জানাতে বলেন৷ মামলার পরবর্তী শুনানি ১৮ জুলাই৷
এছাড়াও মঙ্গলবার দিল্লির রাউজ এভিনিউ আদালতে অনুব্রতর দায়ের করা আরও একটি মামলার শুনানি ছিল৷ রাউজ এভিনিউ কোর্টের বিশেষ বিচারক রঘুবীর সিং তার জামিনের আর্জি ঠিক মত শুনছেন না, তাকে মেডিকেল রেকর্ডও দেওয়া হচ্ছে না, এই মর্মে বিস্তর কারণ দেখিয়ে অন্য বিচারকের এজলাসে তার সব মামলা স্থানান্তরের আবেদন করেছেন অনুব্রত মণ্ডল নিজেই৷ এদিন সেই মামলার শুনানিতে রাউজ এভিনিউ আদালতের বিচারক অরুণ ভরদ্বাজ জানান, তিনি ১৯ জুলাই এই মামলার শুনানি করবেন৷ তার আগে ইডি এবং গরু পাচার মামলার অন্যান্য অভিযুক্ত প্রত্যেককে আদালতে জানাতে হবে তাদের অভিমত৷