আসানসোল: এর আগে দু’বার গোরু পাচার মামলায় দিল্লির তিহাড় জেল থেকে তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডল ও সায়গল হোসেনের ভার্চুয়াল শুনানির কথা থাকলেও টেকনিক্যাল কারণে ফোনে যোগাযোগ না হওয়ায়, তা করা যায়নি। বৃহস্পতিবার তেমন কোনও সমস্যা না হওয়ায় তিহাড় থেকে ভার্চুয়াল শুনানিতে অনুব্রত’র সঙ্গে কথা বলেন আসানসোল সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতের বিচারক রাজেশ চক্রবর্তী। যদিও এদিন আদালতে অনুব্রতর হয়ে জামিনের আবেদন করেননি তাঁর আইনজীবী সোমনাথ চট্টরাজ।
এদিন অনুব্রতর সঙ্গে তাঁর প্রাক্তন দেহরক্ষী সায়গল হোসেনের ভার্চুয়ালি উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও তিনি গরহাজির ছিলেন। বিচারক তা দেখে জিজ্ঞাসা করেন সায়গল কোথায়? অনুব্রত মণ্ডল বিচারককে জানান, সায়গলের হাত ভেঙেছে বাথরুমে পড়ে। এমআরআই করাতে গিয়েছে হাসপাতালে। তাই তিনি নেই। বিচারক অনুব্রত’র উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আপনি তো অনেকটাই রোগা হয়ে গিয়েছেন দেখছি?’ অনুব্রত তাঁর উত্তরে বলেন, ‘হ্যাঁ সাহেব, শরীরের রোগগুলো তো সবই রয়েছে। তাই ওষুধ সবই চলছে।’ বিচারককে অনুব্রত’র প্রশ্ন, ‘শুনছি আমার কেসটা দিল্লি চলে যাবে? আমরা দিল্লি যাব কেন? আমরা বাংলার মানুষ, আমাদের বাড়ি বাংলায়। আমরা দিল্লি যাব কেন? সাক্ষী সহ সবার বাড়ি বীরভূম জেলায়।’ তখন বিচারক বলেন, ‘দিল্লি কোর্ট বলেছে, চার মাস আপনাকে ওখান থেকে সরানো যাবে না। তাই এখন ওখানেই থাকতে হবে।’
বিচারক জানান, ইডি আবেদন করেছে। কেস ট্রান্সফারের সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি। ১৯ অগাস্ট তার শুনানি রয়েছে। বিচারক আরও বলেন, ‘আপনার উকিলকে বলবেন প্রেয়ার করতে। আমি দেখব। কিন্তু দেশের আইন যদি বাধ্য করে কেস ট্রান্সফারের বিষয়টি দেখতে, তাহলে সেই আইন আমাকে মানতে হবে। আইন সবার জন্য সমান। আপনার ক্ষেত্রেও আমার ক্ষেত্রেও।’ অনুব্রত জানতে চান, তিনি হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট যেতে পারেন কিনা। এর উত্তরে বিচারক জানান, অবশ্যই। তিনি আবেদন জানাতে পারেন। পাশাপাশি বিচারককে একটি অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য আবেদন করেন অনুব্রত। তিনি বলেন, ‘আমার সব অ্যাকাউন্টগুলি ফ্রিজ আছে। একটা অ্যাকাউন্ট খোলার ব্যবস্থা করে দিন। লেবার পেমেন্ট হচ্ছে না। বেতন বোনাস কিছুই দিতে পারছি না।’ বিচারক বলেন, ‘আপনার মুখের কথায় এটা সম্ভব নয়। আইনজীবী মারফৎ আবেদন করুন।’ বিচারক বলেন, ‘আপনার মেসেজটা আমি আপনার উকিলকে বলে দিলাম। আপনার আইনজীবী প্রেয়ার করুক আমি দেখব।’ পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য হয় ১২ সেপ্টেম্বর।
প্রসঙ্গত, গত ৩০ জুন ও ১৪ জুলাই অনুব্রত ও সায়গলের ভার্চুয়াল শুনানির কথা থাকলেও তিহাড় জেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগই করা যায়নি। পরপর দু’দিন তাঁদের হাজির না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন বিচারক। জরুরি ভিত্তিতে তিহাড় জেল কর্তৃপক্ষকে মেইল করে বলা হয়েছিল, ১০ অগাস্ট দু’জনের ভার্চুয়ালি উপস্থিতির ব্যবস্থা করানোর। সেইমতো এদিন তিহাড় জেল কর্তৃপক্ষ আসানসোলে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে ভার্চুয়াল শুনানির ব্যবস্থা করে। গত বছর গোরু পাচার মামলায় বীরভুমের বাড়ি থেকে অনুব্রতকে গ্রেপ্তার করেছিল সিবিআই। তার আগে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল সায়গল হোসেনকে।