সমীর দাস,কালচিনি: বেতন, র্যাশন সমস্যা চা বাগানের শ্রমিকদের রোজকার জীবনের অঙ্গ। তার ওপর মাঝেমধ্যে বাগান বন্ধ হয়ে গেলে শ্রমিকদের দু’বেলা খাবারটুকু জোগাড় করতে হিমসিম খেতে হয়। গত ২০ বছরে ডজনখানেক বার বন্ধ হয়েছে আর খুলেছে কালচিনি ব্লকের রায়মাটাং চা বাগান। ৪ মাস আগে ফের বন্ধ হয়ে গিয়েছে বাগানটি। কিন্তু এই সমস্যাকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়েছেন বাগানের নিউ লাইনের শ্রমিক পরিবারের মেয়ে অলিভা লাকড়া। অন্ধ্রপ্রদেশের বিজয়ওয়াড়ার একটি সরকারি কলেজ থেকে নার্সিং কোর্সের পড়া সবে শেষ হয়েছে তাঁর। অলিভার লড়াইকে কুর্নিশ জানাচ্ছেন বাগানের অন্য শ্রমিকরা।
অলিভার মা পিত্তর লাকড়া রায়মাটাং বাগানের শ্রমিক ছিলেন। কিছুদিন আগে তিনি অবসর নিয়েছেন। আর বাবা রঘু লাকড়া কৃষিকাজ করেন। ছোট থেকেই অভাবকে কাছ থেকে দেখেছেন। আর এই অভাবকে সঙ্গী করেই পড়াশোনা চালাতে হয়েছে। কালচিনির উত্তর লতাবাড়ি হিন্দি হাইস্কুল থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে শিলিগুড়ির একটি কলেজে ফার্মাসিস্ট কোর্স করেন অলিভা। এরপর সেখানে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করে ভাইবোনদের পড়াশোনার খরচ চালাতেন তিনি। কয়েক বছর পর বিজয়ওয়াড়ার নার্সিং কলেজে পড়ার সুযোগ পান তিনি। তাঁর কথায়, ‘প্রথমে চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম, এতদূরে একা গিয়ে কীভাবে পড়াশোনা করব। কিন্তু পরে নিজেকে শক্ত করে বিজয়ওয়াড়া চলে যাই।’
তিনি জানান, কোর্স করার পাশাপাশি সেখানকার বাচ্চাদের পড়াতেন। এতে একদিকে নিজের পড়ার খরচটাও উঠে যেত। অন্যদিকে, ভাইবোনদের পড়াশোনার খরচও কিছুটা উঠত। বোন প্রতিভা শিলিগুড়ির একটি সংস্থায় নার্সিং কোর্স করে এখন টোটোপাড়ার প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের স্টাফ নার্স। ভাই এডউইন স্নাতক স্তরে পড়াশোনা করছেন। আরেক বোন নিভা পড়া শেষ করে বাড়িতে রয়েছেন।
অলিভা বলেন, ‘চা বাগানে স্বাস্থ্য পরিকাঠামো খুব খারাপ।’ এখন বাড়িতে এসে আপাতত কোনও শ্রমিক পরিবারের সদস্য অসুস্থ হয়েছেন শুনলেই তিনি প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। সরকারি চাকরির চেষ্টা করছেন। অলিভার সংঘর্ষপূর্ণ জীবনে সফল হওয়ার ঘটনায় অভিভূত রায়মাটাং চা বাগানের সমাজকর্মী কমল কুজুর। তাঁর কথায়, ‘চা বাগানে হাজারো সমস্যার সামনে দাঁড়িয়ে অলিভা যেভাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করছেন, সেটা বাগানের অন্যদের কাছে আদর্শ।’