পূর্ণেন্দু সরকার, জলপাইগুড়ি: ইন্ডিয়ান অয়েলের (Indian Oil) পাইপলাইন মাটির নীচে থাকায় হাতিনালার গভীরতা বাড়াতে সমস্যায় পড়েছে সেচ দপ্তর। তাই ভুটান পাহাড় থেকে জল নেমে আসার আগেই সেই জলকে ডায়না, রেতি, সুকৃতি নদীতে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে সেচ দপ্তর। এতে হাতিনালা দিয়ে সমতলে জলরাশি প্রচুর পরিমাণে নেমে যাওয়ায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হবে না। সদ্য ধূপগুড়ির মহকুমা শাসকের দায়িত্ব নিয়েই হাতিনালার সমস্যা নিয়ে বৈঠক করে এই খবর দিয়েছেন জলপাইগুড়ির সদর মহকুমা শাসক তমোজিৎ চক্রবর্তী।
জেলার নতুন ব্লক বানারহাট ও বিন্নাগুড়ি শহরের বন্যার জন্য হাতিনালাই দায়ী। দুই মহকুমায় গত সপ্তাহে ও সোমবার দুটি উন্নয়নমূলক বৈঠক কররেন মহকুমা শাসক। জানা গিয়েছে, হাতিনালা অতীতে অনেক সংকীর্ণ ছিল। ধাপে ধাপে বড় নালার আকার নিয়েছে। হাতিনালায় জল কোথা থেকে আসে। কী পরিমাণ জল আসে। ডুয়ার্সের (Dooars) বিভিন্ন ঝোরা, ভুটানের কোন অংশ দিয়ে হাতিনালায় জল আসে, তা নিয়ে সেচ দপ্তর ও সেচ দপ্তরের রিভার রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (River Research Institute) বিশেষজ্ঞরা সম্প্রতি বিস্তর সমীক্ষা করেছেন। হাতিনালার ক্রস সেকশন এলাকায় দুটি সেতু আছে পূর্ত দপ্তরের। যার একটিকে চওড়া করা হয়েছে। কিন্তু তাহলেও কেন প্লাবিত হচ্ছে বানারহাট এলাকা তারও খোঁজ নেওয়া হচ্ছে প্রশাসনের তরফে।
কিন্তু হাতিনালাকে বেশি গভীর করে ড্রেজিং করা সম্ভব নয়। কারণ নালার তলা দিয়ে ইন্ডিয়ান অয়েলের পাইপলাইন গিয়েছে। ভুটান পাহাড় থেকে কী পরিমাণ সেডিমেন্ট অর্থাৎ নুড়ি, পাথর, বালি, ডলোমাইট হাতিনালা দিয়ে নেমে আসে তার তথ্য জোগাড় করেছে সেচ দপ্তর। হাতিনালাকে এখন যতটুকু ড্রেজিং করা হচ্ছে তা জলধারণের জন্য উপযোগী নয়। প্রয়োজন নালার পাশে বেদখল সরিয়ে হাতিনালাকে চওড়া করা। যাঁরা বেদখল করে আছেন, তাঁদের জন্য কী করা যায় তা নিয়েও প্রশাসনকে ভাবতে হচ্ছে। আগে ভুটান (Bhutan) পাহাড় থেকে হুড়মুড়িয়ে নেমে আসা জল সমতলে ডায়না ও রেতি, সুকৃতি নদীতে যেত। ভুটান পাহাড় থেকে নেমে আসা জলের বড় অংশই কি তাহলে হাতিনালায় মিশছে না। তা না হলে বানারহাট ভাসিয়ে নেওয়ার মতো পরিস্থিতি স্থানীয় বৃষ্টির কারণে কখনোই হতে পারে না। এক্ষেত্রে ভুটান পাহাড় থেকে নেমে আসা বিপুল জলরাশি ডায়না বা রেতি-সুকৃতিতে যাতে চলে যায় সেই চেষ্টা চলছে।
হাতিনালা নিয়ে বানারহাট বা আরও উপরের অববাহিকায় সমস্যা রয়েছে, নীচের দিকে মোরাঘাট ও কয়েকটি চা বাগানের দিকে সেই ভয় নেই। সেচ দপ্তরের উত্তর-পূর্ব বিভাগের চিফ ইঞ্জিনিয়ার (Chief Engineer) কৃষ্ণেন্দু ভৌমিক বলেন, ‘সেচ দপ্তর পরিকল্পনা করছে হাতিনালার জল উপর থেকে নামার সঙ্গে সঙ্গে ডায়না বা রেতি, সুকৃতি নদীতে যাতে মিশিয়ে দেওয়া যায়।’ ধূপগুড়ির মহকুমা শাসক তমোজিৎ চক্রবর্তী বলেন, ‘সেচ দপ্তরের সঙ্গে হাতিনালা নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। হাতিনালার জলকে কীভাবে পাহাড় থেকে সমতলে নামার সময় নদীর দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া যায়, সেই পরিকল্পনার কথাই ভাবছে সেচ দপ্তর।’