প্রণব সূত্রধর, আলিপুরদুয়ার: জংশন সংলগ্ন এলাকায় বেশ কয়েকটি চা, পানের দোকান। তবে সেগুলির মধ্যেই দু’একটির ব্যাপারস্যাপারই আলাদা। বিশেষ করে একটি চায়ের দোকানের সামনে একটু রাত হলেই এসে দাঁড়ায় বড় বড় গাড়ি, দামি বাইক। সওয়ারিরা কি চা খেতেই আসে? প্রশ্ন উঠেছে। কারণ অল্প সময় দাঁড়িয়েই আবার হুস করে চলে যায় সেসব গাড়ি। সামনে থেকে দেখলে সাধারণ চায়ের দোকান। সেই দোকানের পিছনে প্রশস্ত জায়গা থাকছে। দোকানে আবার উচ্চমধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্ত পরিবারের ছেলেপুলের ভিড়।
ক্রেতা এলেই মালিক চলে যায় দোকানের পিছনে। কী নিয়ে আসে? কেবল ওই চায়ের দোকান নয়, আশপাশের কয়েকটি পানের দোকানেরও এরকমই কারবার। স্থানীয়দের অভিযোগ, চা-পানের দোকানের আড়ালে আগে একসময় গাঁজা বিক্রি করা হত। এখন নাকি সেখানে মাদক বিক্রি হচ্ছে। ইতিপূর্বে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে অনেককে। ছাড়া পেয়ে ফের বুক ফুলিয়ে কারবার করে চলেছে। আলিপুরদুয়ারের পুলিশ সুপার ওয়াই রঘুবংশী বলেন, ‘মাদক বিক্রির অভিযোগে অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অভিযোগ পেলে পুলিশের তরফে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়ে থাকে। তাছাড়া এই বিষয়ে পুলিশ সতর্ক রয়েছে।’
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, প্রথমে অল্পবয়সিদের দল থেকে কোনও একজনকে টার্গেট করা হয়। সে নেশার খপ্পরে পড়লেই দল তৈরিতে উৎসাহ দেওয়া হয়। দল বানাতে পারলেই মেলে ‘উপহার’। আলিপুরদুয়ার জংশন সহ শহরের বিভিন্ন জায়গায় এই দল নজরে পড়বে। প্রতিটা দলের ঠেক ও বৈশিষ্ট্য আলাদা। কখনও বাইক নিয়ে সদলবলে অ্যাডভেঞ্চার করতে বেরিয়ে পড়ে তারা। কখনও বা অন্য কোনওভাবে আসর জমায়। শহর ও শহরতলিতে বিভিন্ন বয়সিদের এই দলই মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে।
এমনকি জিম করতে গিয়ে বা নাচ শিখতে গিয়েও চলে বন্ধুত্ব গড়ে এই দল পাকানোর কাজ। নতুন নতুন তরুণ-তরুণীদের মধ্যে নেশার প্রবণতা ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ চলে অক্লান্তভাবে। বিক্রেতারা এজেন্ট হিসেবে কাজ করে। নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত দোকান চালানোর পর অর্ডার মতো মাদক সরবরাহ করা হয়। মোবাইলেও মাদকের অর্ডার দেওয়া যায়। আর এলাকার কয়েকজন প্রভাবশালী এই মাদকের কারবার চালানোর মূলধনের জোগান দেয়। কখনো-কখনো কোনও একজনের উপর পুরো দলের খরচ ওঠানোর দায়িত্ব পড়ে। তখনই চাপে পড়ে বাড়ি থেকে টাকা ও জিনিসপত্র সরাতে শুরু করে আসক্তরা। দুষ্কর্মে হাত পাকায়। নেশার প্রতি ঝোঁক রয়েছে এবং টাকার জোগান দিতে পারবে, এমন পরিবারের ছেলেমেয়েরাই টার্গেট হচ্ছে। নাবালিকা-তরুণীদের একাংশ নেশার খরচ তুলতে গিয়ে দেহব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছে। শহরের এক অভিভাবকের কথায়, ‘বাড়িতে কেউ ধূমপান করে না অথচ ঘরে সিগারেটের মোড়ক ও চকোলেটের প্যাকেট পড়ে থাকতে দেখে সন্দেহ হয়। পরে দেখি আমার নাবালক ছেলেও জংশন এলাকার সেই চায়ের দোকানে যায়। আমরা ওর নেশা ছাড়ানোর চেষ্টা করছি।’ পুলিশ মাঝেমধ্যে ধরপাকড় করলে এসব নেশার কারবার কয়েকদিনের জন্য বন্ধ থাকে। ব্যবসা চালু রাখতে তখন ক্রেতাদেরকেই এজেন্ট হিসেবে কাজ করানো হয়। এদিকে, কোনও কারবারি ধরা পড়লে তার কাছে খুব বেশি পরিমাণে মাদক মেলে না। ফলে পোক্ত কেস দেওয়া যায় না। সহজেই ছাড়া পেয়ে যায়।