বালুরঘাটঃ একজন বা দুজন নয়। এবছর মাধ্যমিক পরীক্ষায় একই স্কুল থেকে চারজন পরীক্ষার্থী স্থান পেয়েছে রাজ্যের মেধা তালিকায়। হ্যাঁ, এমনটাই সম্ভব করে দেখিয়েছে ঐতিহ্যবাহী বালুরঘাট হাই স্কুল। ১১৭ বছর পুরোনো এই স্কুলের গৌরব অক্ষুণ্ণ থাকায় খুশি স্কুল কর্তৃপক্ষ থেকে অবিভাবকমহল।
দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার ঐতিহ্যবাহী স্কুল বালুরঘাট হাই স্কুল। শতাব্দী প্রাচীন এই স্কুলের প্রতিষ্ঠা হয় ১৯০৭ সালে। স্বাধীনতা সংগ্রামের অনেক ইতিহাস জড়িয়ে রয়েছে এই স্কুলকে কেন্দ্র করে। ১৯৪৭ সালের ১৪ অগাস্ট যখন পাকিস্তান স্বাধীন হয়। সেই দিনই পাকিস্তানি সেনারা বালুরঘাট হাই স্কুল নিজেদের দখলে নিয়ে নেয়। কিন্তু তৎকালীন প্রধান শিক্ষক কুমুদরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়ের প্রতিরোধে পাকিস্তানি সেনারা তাদের পতাকা তুলতে পারেনি স্কুলে। ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় তৎকালীন এই স্কুলের ছাত্র তথা স্বাধীনতা সংগ্রামী সরোজ রঞ্জন চট্টোপাধ্যায় ও পুলিনবিহারী দাসগুপ্ত এখানে সংগ্রাম গড়ে তুলেছিলেন। ১০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই স্কুলের পড়ুয়ারা দেশ-বিদেশের বিভিন্ন জায়গায় সুপ্রতিষ্ঠিত। বিদেশে গবেষণা করছেন অনেক প্রাক্তনী। বরাবরই মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে মেধা তালিকায় নাম থাকে বালুরঘাট হাই স্কুলের। গত বছর মাধ্যমিকেও এই স্কুল থেকেই ষষ্ঠ স্থান পেয়েছিল সতীর্থ সাহা। এবছর মাধ্যমিকের মেধা তালিকায় জায়গা করে নিল এই স্কুলের চার মেধাবী ছাত্র। মেধাতালিকায় তৃতীয়, ষষ্ঠ, সপ্তম ও নবম স্থান অর্জন করেছে স্কুলের চার পরীক্ষার্থী।
জানা গিয়েছে, এবছর মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসেছিলেন বালুরঘাট হাই স্কুলের ২৩১ জন পরীক্ষার্থী। তার মধ্যে থেকে ২৩০ জনের ফল প্রকাশ হয়েছে এদিন। একজনের ফল অসম্পূর্ণ দেখা গিয়েছে। অধিকাংশ ছাত্র প্রথম ডিভিশনে পাশ করলেও ১০৪ জন পরীক্ষার্থীর নম্বর ৬০ শতাংশের নিচে রয়েছে। এই স্কুল থেকেই এবছর গৌড়বঙ্গে প্রথম উদয়ন প্রসাদ ৬৯১ নম্বর পেয়ে রাজ্যে সম্ভাব্য তৃতীয় স্থান পেয়েছে। ৬৮৮ নম্বর পেয়ে ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে কৃষানু সাহা। ৬৮৭ নম্বর পেয়ে রাজ্যে সপ্তম স্থানে রয়েছে সাহেব কাছারি পাড়ার শাশ্বত দে। ৬৮৫ নম্বর পেয়ে রাজ্যে নবম স্থানে রয়েছে রৌনক ঘোষ।
বালুরঘাট হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক সৃজিত সাহা বলেন, ‘এই স্কুলের সঙ্গে বালুরঘাটবাসীর অনেক আবেগ, স্মৃতি জড়িয়ে। তাই এবছর মাধ্যমিকের ফলে গর্বিত শহরবাসী। স্কুলের শিক্ষক হিসেবে হয়ত আমার খুশির পরিমাণটা একটু বেশিই। ওই চারজন কৃতী ছাত্রের জন্য তো আমরা অবশ্যই আনন্দিত। তবে নম্বরের তালিকার শেষ ছেলেটার জন্যও আমরা গর্বিত। আমাদের গড় ফলাফল যথেষ্ট ভাল হয়েছে। শিক্ষক, ছাত্র সকলে মিলে স্কুলকে এগিয়ে নিয়ে যাব।অক্ষুন্ন থাকবে স্কুলের গৌরব।’