ফাঁসিদেওয়া: একাধিকবার ব্যর্থ চেষ্টার পর অবশেষে দলছুট দাঁতাল এবং মাকনা হাতিকে (Elephant) ট্রাঙ্কুইলাইজ করে জঙ্গলে ফেরাতে সফল হল রাজ্য বনদপ্তর। শুক্রবার ভোরে ফাঁসিদেওয়া (Phansidewa) বন্দরগছ এলাকায় হাতি দু’টি ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে (India-Bangladesh Border) কাঁটাতার বেড়ার ওপারে জিরো পয়েন্টে আশ্রয় নেয়। এদিন প্রায় ১২ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে বনদপ্তরের (Forest Department) অপারেশন চলে। সন্ধ্যায় লরিতে করে হাতিটিকে পাঠানো হয় মহানন্দা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে। এতেই স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে রাজ্য বনদপ্তর।
সোমবার বৈকুন্ঠপুর থেকে বেরিয়ে ৫ দিনের বেশি সময় জঙ্গলের বাইরে ছিল পূর্ণবয়স্ক পুরুষ দাঁতাল ও মাকনা। বনদপ্তর সূত্রের খবর, প্রায় ১৫০ ঘণ্টারও বেশি সময় হাতি দু’টি জঙ্গলের বাইরে থাকায় স্বাভাবিক গতিবিধিতে বদল আসে। ফলে তাদের বাগে আনতে বনদপ্তর নাকাল হয়ে পড়ে। এই হাতি (Elephant) দু’টি বৃহস্পতিবার চোপড়ার বড়বিল্লা এলাকায় ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে কাঁটাতারের ওপারে মহানন্দা নদীর পাশের জঙ্গলে আশ্রয় নিয়েছিল।
ওই রাতে ১২টা পর্যন্ত বনদপ্তর তাদের নজরদারিতে রেখেছিল। এরপরই তারা নজর থেকে হারিয়ে যায়। এদিন ভোরে খবর পাওয়া যায় দাঁতাল ও মাকনা ফের ফাঁসিদেওয়াতে সীমান্তে ২ বার কাঁটাতার ভেঙে বন্দরগছ এলাকায় আন্তর্জাতিক সীমান্তের জিরো পয়েন্টে একটি ঝোপে আশ্রয় নিয়েছে। খবর যেতেই বনদপ্তরের আধিকারিক সহ কয়েকশো বনকর্মী ঘটনাস্থলে পৌঁছান। বৃহস্পতিবারও চোপড়ায় হাতি দু’টিকে ট্রাঙ্কুইলাইজ করার প্রস্তুতি নেওয়া হলেও, ব্যর্থ হয়েছিল বনদপ্তর। তাই, এদিন সকাল থেকেই শুরু হয় প্রস্ততি।
সকালে একবার ঘুমপাড়ানি গুলি ছোঁড়া হলেও, তা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। এরপর বনদপ্তর গরুমারা থেকে ভোলানাথ ও কাবেরি নামে দু’টি কুনকি হাতিকে লরিতে করে ফাঁসিদেওয়া নিয়ে আসে। একে একে সীমান্তের ২২ নম্বর গেট খুলে সেগুলিকে দলছুট হাতিদের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। দাঁতাল ও মাকনাকে প্রথমবারেই ট্রাঙ্কুইলাইজ করা হয়। দাঁতালটিকে লরিতে হাইড্রোলিক ক্রেনের সাহায্যে লরিতে তোলা হয়। কিছু সময় পেরিয়ে যাওয়ায়, ওষুধের প্রভাব কমতে শুরু করে মাকনার শরীরে। মাকনাকে কুনকি দিয়ে নিয়ে আসার সময় জ্ঞান ফিরতেই বেল্ট ছিড়ে হাতিটি ফের ছোটাছুটি শুরু করে।
এদিকে, হাতি দেখতে সীমান্তের পাড়ে হাজার হাজার মানুষ ভিড় করেন। কেউ গাছে চড়ে, আবার কেউ হাতির সামনে হাতি দর্শনে হাজির হন। ফলে, হাতিটি ফের আক্রমণ করলে বড় ক্ষতির সম্ভাবনা ছিল। একপ্রকার বাধ্য হয়েই কিছুক্ষণ পর মাকনাটিকে বাগে আনতে বনদপ্তর ফের ২ বার ঘুমপাড়ানি গুলি চালাতে বাধ্য হয়। সেইসঙ্গে উৎসাহিত মানুষকে নিয়ন্ত্রণে রাখাও বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। ফাঁসিদেওয়া থানার ওসি ইফতিকার উল হাসানের নেতৃত্বে বিশাল পুলিশবাহিনী যেমন ছিল, তেমনই বিএসএফের (BSF) ১৭৬ নম্বর ব্যাটালিয়নের জওয়ানরাও সাধারণ মানুষকে সতর্ক করছিলেন।
পাশাপাশি, ঐরাবত নামে একটি পশুপ্রেমী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের তরফে গোটাদিন এলাকায় স্থানীয়দের সতর্ক করার কাজ করেছে৷ হাতি দু’টি চলতি সপ্তাহের সোমবার রাতে বৈকন্ঠপুর বনবিভাগের আমবাড়ি রেঞ্জের বনাঞ্চল থেকে বেরিয়ে পড়ে। ফুলবাড়ির লালদাসজোত সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশের (Bangladesh) পঞ্চগড় জেলার তেতুলিয়ার কাশেমগঞ্জে যায়। মঙ্গলবার রাতে বাংলাদেশ থেকে বনকর্মীরা ফাঁসিদেওয়া বন্দরগছের আন্তর্জাতিক সীমান্তের ২১ নম্বর গেট খুলে ভারতে ফিরিয়ে আনা হয়।
এরপর বুধবার বিধাননগর সংলগ্ন বিহারে থাকার পর রাতে চটহাট প্রবেশ করেছিল হাতি দু’টি। সেখান থেকে বেরিয়ে বৃহস্পতিবার চোপড়া বড়বিল্লা এলাকায় সীমান্তে থাকার পর এদিন ভোরে ফের ফাঁসিদেওয়ার একই এলাকায় ফিরে এসেছিল। ডিএফও (কার্সিয়াং) হরেকৃষ্ণণ পিজের মন্তব্য, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে সকল নিয়ম মেনে গরুমারা এবং শিলিগুড়ি বেঙ্গল সাফারির পশু চিকিৎসকের তত্বাবধানে হাতি দু’টিকে ট্রাঙ্কুইলাইজ করা হয়েছে। এদিনই তাদের জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়া হবে। উত্তরবঙ্গের সমস্ত বনবিভাগের সমস্ত রেঞ্জের আধিকারিক এবং বনকর্মীদের সমবেত প্রচেষ্টায় সফলভাবে হাতি দু’টিকে জঙ্গলে স্থানান্তরিত করা হচ্ছে। হাতি দু’টি শারীরিকভাবে সুস্থ রয়েছে বলে তিনি দাবি করেছেন।