নয়াদিল্লি: ‘সাত জার্মান, বাঘেল একা’। একেবারে একাই লড়লেন তিনি, লড়লেন নির্ভয়ে। দিল্লিতে নীতি আয়োগের বৈঠক থেকে একে একে যখন সরে দাঁড়িয়েছেন ১০ জন বিরোধী রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, ঠিক তখনই ব্যতিক্রমী ভূমিকায় অবতীর্ণ হলেন ছত্তিশগড়ের মুখ্যমন্ত্রী, বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা ভুপেশ বাঘেল। নীতি আয়োগের বৈঠকে সমগ্র বিরোধী শিবিরের হয়ে একাই ‘ব্যাটন’ হাতে তুলে নিলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শা এবং অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমনের উপস্থিতিতে স্পষ্ট ভাষায় জানালেন বিরোধীদের দাবিদাওয়া, প্রশ্ন তুললেন কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্ক নিয়ে, দাবি জানান বকেয়া টাকা মেটানোর। এককথায়, সম্মিলিত বিরোধী শিবির নীতি আয়োগের মঞ্চকে যথাযথ ব্যবহার করতে না পারলেও, ছত্তিশগড় মুখ্যমন্ত্রী ভুপেশ বাঘেল এদিন ঠারে ঠারে বুঝিয়ে দিলেন তাঁর অবস্থান-ভাঙবেন, কিন্তু মচকাবেন না।
বিকশিত ভারত, লক্ষ্য ২০৪৭। এই লক্ষ্যে বিবিধ ইস্যুতে মনোজ্ঞ পর্যালোচনার উদ্দেশ্যে শনিবার নয়াদিল্লির প্রগতি ময়দানের ‘নিউ কনভেনশন সেন্টারে’ (এনসিসি) বসেছে নীতি আয়োগের ৮ম গভর্নিং কাউন্সিলের বৈঠক। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি স্বয়ং বৈঠকটির সভাপতিত্ব করেন। যদিও বিরোধী শিবিরের একাংশ আগেই এই বৈঠক বয়কট করার সিদ্ধান্ত নেয়। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগেই জানিয়েছিলেন কেন্দ্রের আয়োজিত নীতি আয়োগের বৈঠকে তিনি যোগ দেবেন না। এরপরে দিল্লি মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল, পঞ্জাব মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মানও জানিয়েছেন, তাঁরাও নীতি আয়োগের বৈঠকে যোগ দেবেন না। পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট তালিকায় শামিল হন তামিলনাড়ু মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্টালিন, কেরল মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন, বিহার মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার সহ তেলঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রীকে চন্দ্রশেখর রাও (কেসিআর), রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলত, কর্ণাটক মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া এমনকি ওডিশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পটনায়কের মতো নেতারাও। ব্যতিক্রম শুধু ছত্তিশগড় মুখ্যমন্ত্রী ভুপেশ বাঘেল। সূত্রের দাবি, এদিন বৈঠকে অংশ নিয়ে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উত্থাপন করেন বাঘেল, যা বিরোধীদের জন্য অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক বলে মনে করা হচ্ছে বিশেষজ্ঞ মহলের একাংশে।
সূত্রের দাবি, এদিন বৈঠকে ‘রাজ্যের অধিকার’ নিয়ে সরব হয়েছেন বাঘেল। ‘কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আমার একান্ত আর্জি, তারা যেন রাজ্যের অধিকারকে যথাযথ সম্মান করেন…রাজ্যের যা কিছু প্রাপ্য বা বকেয়া তা যেন সম্মানের সঙ্গে হস্তান্তরিতের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রীয় সম্পর্ক মজবুত করায় উদ্যোগী হয়’-জানিয়েছেন ভুপেশ বাঘেল। বাঘেল বলেন, ‘রাজ্যভিত্তিক একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় থাকে যা নিয়ে কেন্দ্রীয় স্তরে প্রাধান্য পায় না। এই বিষয়গুলি নিয়ে সংসদীয় পরিসরে পুঙ্খানুপুঙ্খ আলোচনার সুযোগ করে দেওয়া উচিত সরকার পক্ষের। পাশাপাশি জিএসটি কর আরোপের ক্ষেত্রে যে সকল রাজ্য ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে, তাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য ‘পাকাপোক্ত ও স্থায়ী বন্দোবস্ত’ করা হোক।‘ একইসঙ্গে নতুন পেনশন প্রকল্পে বিভিন্ন রাজ্যে বকেয়া ১৯ হাজার কোটি টাকা অবিলম্বে ছাড়ার কথাও বৈঠকে জানান ছত্তিশগড়ের মুখ্যমন্ত্রী। এর সঙ্গেই কয়লা, খনিজ পদার্থ, রাসায়নিক এবং বিদ্যুতের ভর্তুকি নিয়ে ছত্তিশগড় সরকারের বিপুল পরিমাণ বকেয়া মেটানোর আর্জিও নীতি আয়োগের বৈঠকে রেখেছেন তিনি, দাবি সূত্রের। তিনি জানান, রাষ্ট্রের হিত ও উন্নতিতে রাজ্যের ভূমিকা অনস্বীকার্য। কিন্তু বহুক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, রাজ্যের অধিকার খর্ব করে কেন্দ্র সরকার নিজ অবস্থান কায়েম করতে চায়, উপরাজ্যপাল এবং রাজ্যপালের সাহায্যে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ভোটে জিতে আসা শাসনব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে ‘সমান্তরাল শাসনব্যবস্থা’ তৈরি করার অপচেষ্টা চালানো হয়। সাংবিধানিক পরম্পরাগত ঐতিহ্যের কথা ভেবে এই স্বৈরাচারী মানসিকতা থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে পরামর্শ দেন তিনি। বাঘেলের চোখা চোখা প্রস্তাবে রীতিমতো বেকায়দায় পড়ে কেন্দ্র।