রণজিৎ ঘোষ, শিলিগুড়ি: চাষিরা যাতে সরাসরি ধান (Paddy) বিক্রি করে উপযুক্ত মূল্য পান, সেজন্য সরকারি সহায়কমূল্যে ধান কেনার ব্যবস্থা করেছে রাজ্য সরকার। অথচ অভিযোগ, শিলিগুড়ি (Siliguri) মহকুমায় চাষিদের থেকে সরাসরি ধান কেনা প্রকল্পের রাশ ফড়েদের হাতে। ভুয়ো চাষির নাম নথিভুক্ত করে বিহার (Bihar) থেকে ধান এনে বেশি দামে বিক্রি করছে তারা।
এখানে ধান বিক্রি করে কুইন্টাল প্রতি ৬০০-৬৫০ টাকা মুনাফা করছে ফড়েরা। এমনকি মহকুমায় ধানের যে উৎপাদন দেখানো হয় তার ৯০ শতাংশই বিহার থেকে আসে। অথচ ধানের হিসাব ধরেই মহকুমায় একের পর এক রাইস মিল তৈরির ছাড়পত্র দিয়েছে রাজ্য সরকার। বাস্তবে এই রাইস মিলগুলি কোনওদিনই চালু হয় না বলেও অভিযোগ রয়েছে।
শিলিগুড়ির মহকুমা খাদ্য নিয়ামক তারিক আনোয়ার চৌধুরী অবশ্য বলেছেন, ‘আমরা চাষিদের থেকেই সরাসরি ধান কিনছি।’ তাঁর আবার পালটা প্রশ্ন, ‘এলাকায় ধানের উৎপাদন না হলে সিপিসিতে বিক্রির জন্য কীভাবে আসছে? রাইস মিলগুলিও ভালোভাবেই কাজ করছে।’
শিলিগুড়ি মহকুমার চারটি ব্লকেই প্রতি বছরের মতো এবারও খাদ্য দপ্তরের অধীনে সিপিসি খুলে ধান কেনার প্রক্রিয়া চলছে। কিন্তু শিলিগুড়ি মহকুমায় তো এত ধান উৎপাদন হয় না, তাহলে সিপিসিতে রোজ ধান আসছে কোথা থেকে? সূত্রের খবর, এখানেই কাজ করছে বড় চক্র। যে চক্রটি বিহারে ঠাকুরগঞ্জ, পুঠিয়া, আরারিয়া সহ অন্যান্য জায়গা থেকে ধান কিনে গাড়ি ভর্তি করে চেকরমারি সীমানা দিয়ে এই জেলায় ঢুকছে। সেই ধান এখানকার সিপিসিতে বিক্রি করে মোটা মুনাফা আদায় করছে ফড়েরা। বিহারে এই চক্রটি গ্রামে গ্রামে কৃষকদের কাছে গিয়ে কুইন্টাল প্রতি ১৫০০-১৬০০ টাকা দরে ধান কিনছে। সেই ধান সিপিসিতে ২২০৩ টাকা কুইন্টাল হিসাবে বিক্রি করা হচ্ছে। অর্থাৎ এক কুইন্টাল ধান বিক্রি করে পরিবহণ খরচ বাদেও ৬০০ টাকার উপরে লাভ।
সরকারি নিয়ম মেনে আবেদনপত্র পূরণের পরেও বিহারের ধান এখানে বিক্রি হচ্ছে কীভাবে? জানা গিয়েছে, ভুয়ো কৃষক এবং ভাগচাষি তৈরি করে এই চক্র কাজ করছে। যে কৃষকের জমিতে বছরে ৫ কুইন্টাল ধান উৎপাদন হয়, তাঁর নথিপত্রে ১০০ কুইন্টাল পর্যন্ত দেখানো হচ্ছে। আবার যে কৃষকের হয়তো ধানিজমিই নেই, সেই কৃষকের আধার কার্ড, জমির খতিয়ান, মোবাইল নম্বর নিয়ে ফড়েরা নিজের মতো করে অ্যাকাউন্ট বানিয়ে নিচ্ছে। বিহার থেকে ধান এনে সেই কৃষকের নামেই লেনদেন করা হচ্ছে।