শিলিগুড়ি: জন আব্রাহাম (John Abraham) অভিনীত কবীরের কথা মনে রয়েছে? টাকা চুরির পর একবার বাইকে উঠে গেলে তাকে ও তঁার দলের সদস্যদের ধরা সোনার পাথর বাটির সমান ছিল। সিনেমাপ্রেমিদের কাছে কবীরের সেই বাইক স্টান্ট-স্টাইল, খলনায়ক থেকে রীতিমতন হিরোর চরিত্রে নিয়ে গেলেও শহরের বিভিন্ন থানার পুলিশের কাছে ওই চরিত্র খলনায়কই। কারণ ওইধরণের এক চরিত্রই মাঝেমধ্যে রাতের ঘুম উড়ে দিচ্ছে শিলিগুড়ি মেট্রোপলিটন পুলিশের। নিজের দলবল নিয়ে কবীরের কায়দাতেই বিভিন্ন সময় চলে আসছে শহরে। তবে টাকা পয়সা নয়, বাইকই চুরি (Bike Lifter) করে নিয়ে যাচ্ছে। গাড়ি চুরি করেও নেপালে নিয়ে যাওয়ার রেকর্ড রয়েছে।
একটা কিংবা দুটো বছর নয়, চোদ্দবছরেরও বেশি সময় ধরে সঞ্জু বিশ্বকর্মা ত্রাস হয়ে রয়েছে শিলিগুড়ি মেট্রোপলিটন পুলিশের (Siliguri Police) অন্দরে। কতগুলো বাইক এখনও অব্দি চুরি করে নিয়ে গিয়েছে, তার সঠিক হিসেব অবশ্য নেই কোনও থানার কাছেও। কারণ এই চোদ্দ বছরে, অনেক অফিসারই গিয়েছে। অনেক অফিসারই এসেছে। যদিও আড়ালে আবদারে, সে হিসেবের ব্যাপারে প্রশ্ন করলে কিছুটা করুণ সুরেই অনেক অ্যান্টি ক্রাইম অফিসার বলে ওঠেন, সংখ্যাটা এতদিনে হাজার পার করে গিয়েছে। তাই বিভিন্ন থানার অ্যান্টি ক্রাইম ব্রাঞ্চ অফিসে গেলেই দেখা যায়, ‘টার্গেট-সঞ্জু বিশ্বকর্মা অ্যান্ড হিজ গ্রুপই, বাইক লিফটার’।
এতক্ষণে নিশ্চয়ই মনে প্রশ্ন জাগছে, কে এই সঞ্জু বিশ্বকর্মা? কীভাবেই বা সঞ্জু চালায় অপারেশন? বিভিন্ন থানা ঘুরেই এব্যাপারে পাওয়া তথ্য অবাক করে। একসময়, দেবিডাঙ্গার বাসিন্দা সঞ্জু ছোটখাটো চুরির কাজই করত। তবে পরবর্তী হঠাৎ করেই তার চুরির মাধ্যম বদলে যায়। ছোটখাটো চুরি নয়, নজর গিয়ে পড়ে বাইকের ওপর। বদলে ফেলে নিজের ঠিকানাও। দেবিডাঙ্গার বদলে সে থাকতে শুরু করে নেপালে। সেখানেই নিজের একটি টিম তৈরি করে। পুলিশ সুত্রে জানা গিয়েছে, বাইক চুরির পরে সে ও তঁার টিম সেটা নিয়ে চলে যায় নেপালে। আর একবার নেপালে নিয়ে গেলে, সেটা ফিরিয়ে আনা যে কঠিন, সেটা আলাদা করে কিছু আর বলার নেই। তবে কবীরের মতন সঞ্জু-র ও স্টাইল রয়েছে। হাতে থাকা বাঘের ফুলকির মতনই একবার সে বাইকে চড়ে গেলে তঁাকে ও তঁার দলকে ধরা দুসাধ্য। সমস্যা আরও রয়েছে, নেপাল থেকে এসে সঞ্জুর গ্রুপ কখন শহর শিলিগুড়িতে হানা দেবে, তার আগাম অনুমান নেই কারও কাছেই। অপারেশনে সুবিধার জন্য মূলত রাতে বিশেষ করে অপার্টমেন্টগুলোই থাকে, সঞ্জুর গ্রুপের টার্গেট। কারণ সেখানে একসঙ্গে অনেকগুলো বাইক একসঙ্গে থাকে। এক পুলিশ কর্তা বলছিলেন, ‘বিভিন্ন সিসিটিভি ফুটেজে একটা কমন ব্যাপার নজর করা গিয়েছে, সবসময়ই তঁার পরনে থাকে হ্যাফ প্যান্ট।’ হ্যাফ প্যান্টের রহস্য কী তা অবশ্য জানা নেই, কারোরই। গত দুই অবশ্য সঞ্জুর গ্রুপ শহরে হানা দেয়নি। তবে যে কোনও সময়ই ওই গ্রুপ আসতে পারে, আর এলে আর ছাড়া যাবে না। তাই তো শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনার সি সুধাকর বলেই দিলেন, ‘এইধরণের দুষ্কৃতীদের আমরা ট্যাকে রাখার চেষ্টা করি। অবশ্য গ্রেফতার করা আইনত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’