রণজিৎ ঘোষ,দার্জিলিং: পাহাড়ের আঞ্চলিক দলগুলি মিলিতভাবে প্রার্থী দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল। লক্ষ্য একটাই, গোর্খাল্যান্ডের দাবিদার দলগুলির ভোট একত্রিত করা। তবে, প্রার্থী কে হবেন তা নিয়ে বৃহস্পতিবারের বৈঠকে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি।
এদিন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার যুব সংগঠনের তরফে দার্জিলিংয়ের জিডিএনএস হলে সর্বদলীয় বৈঠক ডাকা হয়েছিল। সেই বৈঠকে ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চা (বিজিপিএম), বিজেপি, তৃণমূল কংগ্রেস এবং কংগ্রেস বিরোধী সব রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। কার্সিয়াংয়ের বিক্ষুব্ধ বিজেপি বিধায়ক বিষ্ণুপ্রসাদ শর্মা ওরফে বিপি বজগায়েনও বৈঠকে অংশ নেন। তাহলে কি পাহাড়ের আঞ্চলিক দলগুলি বিপি বজগায়েনকেই সমর্থন করবে? মোর্চা সূত্রে খবর, সর্বদল বৈঠকের সিদ্ধান্ত শুক্রবার দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় পেশ করা হবে। সেই বৈঠক থেকেই সিদ্ধান্ত ঘোষণা হতে পারে।
বৈঠক শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ আগেই বিষ্ণু বেরিয়ে যান। পরে তিনি বলেন, ‘সবাই মিলিতভাবে প্রার্থী দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আমিও এই বিষয়ে সহমত। কিন্তু কে প্রার্থী হবেন, কী স্ট্র্যাটেজি হবে সেই আলোচনা হয়নি। শুক্রবারের মধ্যে বাকি দলগুলিকে সিদ্ধান্ত নিতে বলেছি। নইলে আমি ৩০ মার্চ মনোনয়নপত্র জমা দেব।’
এদিন দার্জিলিংয়ের সর্বদল বৈঠক চলাকালীনই খবর আসে, হামরো পার্টি ইন্ডিয়া জোটে নাম লিখিয়েছে। মণীশ তামাংয়ের দল ভারতীয় গোর্খা পরিসংঘও ওই জোটে শামিল হয়েছে। ফলে এই দুটি দলকে বাদ দিয়েই প্রার্থীর চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে। এই দলগুলি প্রার্থী দিলে বিজেপি খানিক সমস্যায় পড়বে বলে রাজনৈতিক মহল মনে করছে।
দার্জিলিং লোকসভা আসনে রাজনৈতিক সমীকরণ প্রতিমুহূর্তে বদলাচ্ছে। বিমল গুরুংয়ের সঙ্গে বৈঠক করে দিল্লি গিয়েই ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স বা ইন্ডিয়া জোটে যোগ দিয়েছেন হামরো পার্টির সভাপতি অজয় এডওয়ার্ড। এদিনই তৃণমূল প্রার্থী গোপাল লামা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। বিজেপি প্রার্থী রাজু বিস্ট মনোনয়নপত্র জমা দেবেন ১ এপ্রিল। কংগ্রেস হামরো পার্টি এবং ভারতীয় গোর্খা পরিসংঘকে নিয়ে প্রার্থী দেওয়ার পথে এগোচ্ছে। বাকি থাকছে বিমল গুরুংয়ের মোর্চা সহ ইউনাইটেড ফোরাম ফর সেপারেট স্টেট-এর অধীনে থাকা কয়েকটি রাজনৈতিক দল এবং বিজেপির বিক্ষুব্ধ বিধায়ক বিপি বজগায়েন। বৃহস্পতিবার সর্বদলীয় বৈঠকে সব দলের নেতারাই বিজেপি, তৃণমূল, কংগ্রেস বিরোধী প্রার্থী দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করেন। স্থির হয়, সব দল মিলে একজনকে প্রার্থী করবে। বিমল গুরুংকে প্রার্থী করার দাবি আগে থেকেই ছিল। এদিনের বৈঠকে বিপি বজগায়েন এবং বন্দনা রাইয়ের নামও উঠেছে। বন্দনা বলছেন, ‘গোর্খা আবেগকে আর বিসর্জন দেওয়া যাবে না। আমাদের ভোট আমাদের কাছেই রাখতে হবে।’
গোর্খা জনমুক্তি যুব মোর্চার নেতা নমন রাই জানিয়েছেন, শুক্রবার মাঝিটারে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক রয়েছে। সেখানেই প্রার্থীর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।
রাজনৈতিক মহলের মতে, গোর্খাল্যান্ডের আবেগকে কাজে লাগিয়ে আঞ্চলিক দলগুলির সম্মিলিত প্রার্থী পাহাড়ে বিজেপির ভোট কেটে নিতে পারে। তেমনটা হলে বিজেপি এবং কংগ্রেস দুই দলেরই চিন্তা বাড়াবে। আখেরে লাভ হতে পারে তৃণমূলের।