পঙ্কজ মহন্ত, বালুরঘাট: ক্রিকেট (Cricket) খেলার খরচ জোগাতে একসময় দু’বিঘা জমি বন্ধক রাখতে হয়েছিল পরিবারকে। কৃষক পরিবারের সেই মেয়ে আজ ন্যাশনাল ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে (National Cricket Academy) সুযোগ পেয়েছে। বাংলার হয়ে অনূর্ধ্ব ১৫ ক্রিকেটে তার অভাবনীয় সাফল্য তাকে এই জায়গায় নিয়ে এসেছে। ইতিমধ্যেই দক্ষিণ দিনাজপুর (Dakshin Dinajpur) জেলা ক্রীড়া সংস্থার সম্পাদকের সাহায্যে অ্যাকাডেমিতে যাওয়ার সমস্ত প্রক্রিয়া শেষ করেছে জেলার মহিলা ক্রিকেটার অঞ্জলি বর্মন।
বালুরঘাট (Balurghat) শহর থেকে ১০ কিমি দূরে গুটিন গ্রাম। সেখানেই অঞ্জলির বেড়ে ওঠা। ভালো পড়াশোনার জন্য সে শহরের আশুতোষ বালিকা বিদ্যাপীঠে ভর্তি হয়েছিল। নবম শ্রেণির পড়ুয়া অঞ্জলি সাত বছর ধরে জেলা ক্রীড়া সংস্থায় ক্রিকেট খেলছে। তার চেষ্টা দেখে সংস্থাও তার পাশে দাঁড়িয়েছে। বাংলার হয়ে সম্প্রতি সে হরিয়ানাতে অনূর্ধ্ব ১৫ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় খেলে এসেছে। তার অতি দ্রুতগতির বোলিংয়ে হামেশাই ধরাশায়ী হয় ব্যাটাররা। তার এই প্রতিভা নজর এড়িয়ে যায়নি ন্যাশনাল ক্রিকেট অ্যাকাডেমির। তাকে বেঙ্গালুরুতে ডেকে পাঠানো হয়। তখন থেকেই প্রস্তুতি শুরু হয় তার।
অঞ্জলির পিছনে পরিবারের সমর্থনও ছিল প্রচুর। তার বাবা অসিত বর্মন ক্ষুদ্র কৃষক। দিল্লি, মুম্বইয়ে শ্রমিকের কাজও করেন। একসময় অঞ্জলির ঠাকুমার দু’বিঘা জমি বন্ধক রেখে মেয়ের ক্রিকেটের খরচ জুগিয়েছেন তিনি। এখন জাতীয় মহিলা ক্রিকেট দলে যাওয়ার আশায় দিন গুনছে অঞ্জলি।
অঞ্জলির কথায়, ‘বাড়িতে মা, বাবা ও ঠাকুমা থাকেন। বাবা কৃষিকাজ করেন। মাঝেমধ্যে ভিনরাজ্যেও কাজে যান। আমি গ্রাম থেকে বালুরঘাটে গিয়ে স্কুল ও ক্রিকেটের কোচিং নিতাম। ডিএসএ আমাকে যথেষ্ট সাহায্য করেছে।’
বাবা অসিত বর্মন বলেছেন, ‘ছোট থেকেই মেয়ের ক্রিকেটে আগ্রহ। তাই ওকে ক্রিকেটে দিয়েছি। কৃষিকাজের পাশাপাশি রাজমিস্ত্রির কাজ করি। আগে মুম্বইয়ে থাকতাম। এখন বাড়িতে আছি। আমাদের ইচ্ছে, মেয়ে ভারতীয় মহিলা ক্রিকেটে খেলুক।’
ডিএসএ’র ক্রিকেট সচিব তন্ময় সমাজদারের দাবি, ‘অঞ্জলির মতো পেস বোলার খুব কমই আছে। বলে ওর ভালো গ্রিপ আছে। তার প্রতিভা বুঝে তাকে অতিরিক্ত কোচিং দেওয়া হয়েছে। আমাদের পরামর্শ ও খুব মন দিয়ে শোনে। ওকে নিয়ে আমরা খুব আশাবাদী।’
জেলা ক্রীড়া সংস্থার সম্পাদক অমিতাভ ঘোষ জানিয়েছেন, অঞ্জলির বেঙ্গালুরু যাওয়ার সমস্ত প্রক্রিয়া হয়ে গিয়েছে। ফিজিও ডাক্তারের শংসাপত্র হয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যেই সম্ভবত সে সেখানে চলে যাবে।’