রাজু হালদার, গঙ্গারামপুর: আলাদা উত্তরবঙ্গ রাজ্যের দাবিতে বিজেপি (BJP) বহুদিন ধরেই সরব হলেও লোকসভা ভোটের (Loksabha election) আগে তারা এই ইস্যুতে চুপ। তবে রবিবার উলটো ছবি দেখল। আর তাতেই পদ্ম শিবিরে মতপার্থক্য প্রকট।
উত্তরবঙ্গকে পৃথক রাজ্য করার দাবিতে গঙ্গারামপুরের (Gangarampur) বিধায়ক সত্যেন্দ্রনাথ রায়ের বাসভবনে বিশেষ প্রস্তাবনা বৈঠক বসে। সত্যেন্দ্রনাথের পাশাপাশি সেখানে গাজোলের বিধায়ক চিন্ময় দেব বর্মন ও কার্সিয়াংয়ের বিধায়ক বিষ্ণুপ্রসাদ শর্মা উপস্থিত ছিলেন। বিষ্ণুপ্রসাদ বলেন, ‘স্বাধীনতার পর থেকেই উত্তরবঙ্গের রাজবংশী, গোর্খা, মেচ, টোটো, রাভা, আদিবাসী সহ সাধারণ মানুষ বঞ্চিত। উত্তরবঙ্গকে এখনও আলাদা দৃষ্টিতে দেখা হয়। এই বঞ্চনা রুখতে আমরা দীর্ঘদিন ধরেই বাংলা ভাগের দাবি করে আসছি। এই দাবিতেই বিশেষ বৈঠক হল।’
ভোটের আগে রাজ্যভাগের ইস্যু তোলা হলে তা বিপক্ষে যেতে পারে বলে বিজেপি নেতাদের বেশ ভালোই জানা আছে। তাই শীর্ষ নেতৃত্ব এই মুহূর্তে উত্তরবঙ্গকে পৃথক রাজ্য করার চিন্তাভাবনা থেকে বিরত রয়েছে। দক্ষিণবঙ্গের ভোটব্যাংক ধরে রাখতে সাবধানি কৌশল এটা। আর তাই বিষ্ণুপ্রসাদের মন্তব্য নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হলে দলের শীর্ষ নেতাদের অনেকেই এড়িয়ে যান বলে মনে করা হচ্ছে। দলের মালদা উত্তরের সাংসদ খগেন মুর্মু, রায়গঞ্জের সাংসদ দেবশ্রী চৌধুরী, আলিপুরদুয়ারের সাংসদ জন বারলা থেকে শিলিগুড়ির বিধায়ক শংকর ঘোষ- কেউই কোনও মন্তব্য করতে চাননি। দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার অবশ্য বলেন, ‘এ বিষয়ে দলের অবস্থান আগেই স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। অতীতে যে রূপে যেভাবে পশ্চিমবঙ্গ তৈরি হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ সেই রূপেই থাকা উচিত।’
সমস্যা হবে জেনেও দলের নীতি এড়িয়ে ভোটের আগে হঠাৎ কেন এভাবে আলাদা রাজ্যের দাবিতে সরব হওয়া? গাজোলের বিধায়ক বললেন, ‘উত্তরবঙ্গের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে বঞ্চিত। রাজনীতি সহ সমস্ত কিছুই কলকাতা কেন্দ্রিক হয়ে উঠেছে। এর বাইরে বেরিয়ে আসা প্রয়োজন। নিজেদের জন্য গর্জে ওঠা প্রয়োজন। সেই দাবিতেই আজ বৈঠক হয়েছে।’ সত্যেন বললেন, ‘বহিরাগতদের সংস্কৃতিতে উত্তরবঙ্গ ভরে গিয়েছে। তাই আলাদা উত্তরবঙ্গ রাজ্য চাই। এই দাবিকে কেউ সমর্থন না করলে আগামীদিনে উত্তরবঙ্গের মানুষ বিদ্রোহ করবে। এনিয়ে তৃণমূলের বেশ কিছু বিধায়কের সঙ্গে কথা হয়েছে। সবাই উত্তরবঙ্গের প্রকৃত উন্নয়ন চাইছেন।’ আগামীতে উত্তরবঙ্গের সব বিধায়ককে নিয়ে শিলিগুড়িতে বৈঠক হবে বলে তিনি জানান।
উত্তরবঙ্গকে কেন্দ্র করে একদিকে দলের তিন বিধায়কের এভাবে সরব হওয়া আর অন্যদিকে দলের শীর্ষ নেতৃত্বর একটি বড় অংশের চুপ থাকার ঘটনায় ভোটের আগে পদ্ম শিবিরের মতানৈক্য এদিন ভালোই বোঝা গিয়েছে। রাজনৈতিক মহলের ধারণা, ভোটের আগে তৃণমূল এটিকে ইস্যু করতে পারে। বিষয়টি উত্তরবঙ্গের পাশাপাশি দক্ষিণবঙ্গের ভোটকেও প্রভাবিত করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।