বুল নমদাস, নয়ারহাট : পঞ্চায়েত ভোটে মাথাভাঙ্গায় বিজেপির প্রার্থীতালিকায় বড় চমক। জেলা পরিষদের ৯ নম্বর আসনে বিজেপি প্রার্থী করল বৈরাগীরহাটের বৃহন্নলা সমাজের কর্ণধার পিংকি বর্মনকে। পিংকি বৃহস্পতিবার মাথাভাঙ্গা মহকুমা শাসকের দপ্তরে মনোনয়নপত্র জমা দিযেছেন। ওই আসনে গতবার জিতেছিলেন তৃণমূলের শুক্লা রায় বিশ্বাস। এবারও তাঁকে তৃণমূল ওই আসনে প্রার্থী করেছে। শুক্লাদেবীর তুলনায় রাজনীতিতে অনভিজ্ঞ পিংকি কিন্তু জেতার ব্যাপারে ১০০ শতাংশ আশাবাদী। তাঁর কথায়, ‘ভিক্ষাবৃত্তি করে সারাবছর মানুষের সেবা করি। বৃহত্তর পরিসরে সেবা করার লক্ষ্যেই ভোটের আঙিনায় পা রাখলাম। মানুষের আশীর্বাদে ভোটে আমিই জিতব।’
বিজেপির কোচবিহার জেলা সহ সভাপতি মনোজ ঘোষ বলেন, ‘সেবামূলক কাজের জন্য পিংকি এলাকায় যথেষ্ট পরিচিত। উনি বিজেপির মতাদর্শে বিশ্বাসী। ভোটে জিতে মানুষের সেবা করার সুযোগ করে দিতেই দল তাঁকে প্রার্থী করেছে। তিনি জিতবেন।’ তৃণমূলের মাথাভাঙ্গা ১(এ) সাংগঠনিক ব্লক সভাপতি মহেন্দ্রনাথ বর্মন অবশ্য মনে করেন, ‘উন্নয়নের নিরিখে সাধারণ মানুষ তৃণমূলকেই ভোট দেবেন। তৃণমূল প্রার্থীর বিরুদ্ধে কে দাঁড়ালেন সেটা কোনও ফ্যাক্টর নয়। ওই আসনে তৃণমূল প্রার্থীই জিতবেন।’ তবে তৃণমূলের ‘ওজনদার’ প্রার্থীর বিরুদ্ধে ভোটের ময়দানে বৃহন্নলা সমাজের পিংকিকে দাঁড় করানোর ঘটনা নজিরবিহীন বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। ইতিমধ্যেই ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িযে পড়েছে।
ভোটের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু এখন পিংকিই। উত্তরবঙ্গে বৃহন্নলা সমাজের বড় মা বলে পরিচিত সোনামণি শেখ। তিনি রাজ্য ট্রান্সজেন্ডার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের সদস্যও। তিনি ফোনে বলেন, ‘আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। দেশের মানুষের সেবা ও উন্নয়নমূলক কাজ করতে লিঙ্গের বৈষম্য থাকা উচিত নয়। ভোটে জিতে পিংকি যদি জনপ্রতিনিধি হন তাহলে বৃহন্নলাদের ওপর মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস বাড়বে। বৃহন্নলারাও আরও অগ্রসর হতে পারবেন।’
দেশ ও দেশের বাইরেও ভোটে জিতে বৃহন্নলাদের জনপ্রতিনিধি হওয়ার উদাহরণ রয়েছে। কিন্তু উত্তরবঙ্গে এমন নজির নেই। বৃহন্নলাদের সংগঠন সূত্রে খবর, বহুদিন আগে শিলিগুড়ি পুরনিগমের ভোটে ময়না দাস নামে এক বৃহন্নলা নির্দল প্রার্থী হিসাবে লড়েছিলেন। কিন্তু সামান্য ব্যবধানে তিনি হেরে যান। এবার সেই পথেই হাঁটলেন পিংকি। ভোটে জিতলে পিংকিই হবেন বৃহন্নলাদের মধ্যে উত্তরবঙ্গের প্রথম নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি।
বৈরাগীরহাট বাজার সংলগ্ন এলাকায় অন্তত ৩০ জন বৃহন্নলা বাস করেন। বৃহন্নলাদের সংগঠন ‘জীবন গাড়ি ফেরিওয়ালা’র কর্ণধার ৩২ বছরের পিংকি। এখানকার ১৪ জন বৃহন্নলার ভোটাধিকার রয়েছে। নবজাতকের মঙ্গল কামনা ও গানবাজনা করার মধ্যে দিযে উপার্জিত অর্থেই পেট চলে তাঁদের। তবু সারাবছর নানা সেবামূলক কাজের সঙ্গে জড়িত তাঁরা। নিজেদের উদ্যোগে অনাথ আশ্রম তৈরি করছেন তাঁরা। কয়েকজন অসহায় বৃদ্ধাকে নিজেদের আশ্রয়ে রেখে অনেকদিন ধরেই ভরণ-পোষণ দিচ্ছেন। প্রার্থী হওয়ার পর পিংকি বলছেন, ‘একটাই তো জীবন। নিজেদের পেট চালিয়ে যা সঞ্চয় হয় তা যদি মানুষের কাজে লাগে ক্ষতি কী? ভোটে জিতলে আরও বেশি মানুষের সেবা করতে পারব।’