নিউজ ব্যুরো: দলের তথাকথিত ‘নিষ্ক্রিয়’ নেতাদের চাঙ্গা করে, আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত করতে হবে৷ ২০২৪-র লোকসভা নির্বাচনকে পাখির চোখ করে যুদ্ধের ময়দানে নামা বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব রাজ্য বিজেপির ভোলবদল করার তাগিদে এমনই নির্দেশ দিয়েছে দলের জাতীয় সচিব অনুপম হাজরাকে, সম্প্রতি এ কথা স্বীকার করেছেন অনুপম স্বয়ং৷
প্রসঙ্গত, সাম্প্রতিক কালে রাজ্য বিজেপির অভ্যন্তরে চলা গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, অন্তর্কলহে জেরবার গেরুয়া শিবির। এর মধ্যেই লোকসভা নির্বাচনের রণঢঙ্কা বেজে ওঠায় সার্বিক পরিস্থিতি মিলিয়ে অন্তত রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে যথেষ্ট চাপে পড়েছে বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে তাঁরা অনেকটাই ভরসা রাখছেন বোলপুরের প্রাক্তন সাংসদের উপর। দিলীপ ঘোষের অপসারণের পর, এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গ থেকে বিজেপির কেন্দ্রীয় স্তরের শীর্ষ পদাধিকারীদের তালিকায় রয়েছেন একমাত্র অনুপম হাজরাই। সেই সূত্রে লোকসভা নির্বাচনের আগে দলের জাতীয় সচিব অনুপমের কাছেই রাজ্যের ৪২টি লোকসভা কেন্দ্রের পরিস্থিতি জানতে চেয়ে সম্প্রতি রিপোর্টও চেয়ে পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। সূত্রের মতে, রাজ্য নেতৃত্বের পাঠানো রিপোর্ট নিয়ে অতীতে প্রশ্ন ওঠায় নিরপেক্ষ রিপোর্ট পেতেই অনুপমকে ওই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
এরই পাশাপাশি তাঁর কাঁধেই তুলে দেওয়া হয়েছে আরও একটি গুরুদায়িত্ব, যেখানে রাজ্য বিজেপির অভ্যন্তরীণ কোলাহলের জন্য ফ্রন্টলাইন থেকে ক্রমশ বিচ্যুত, একাকী এবং নিস্ক্রিয় হয়ে পড়া পুরনো বিজেপি কর্মীদের মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনার অলিখিত নির্দেশ দেওয়া হয়েছে অনুপমকে। অনুপম জানাচ্ছেন, ‘আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে বাংলা থেকে ৩৫ টি আসন জেতার লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিয়েছেন অমিত জি (শাহ)। এই সংকল্প সাধনে দলের সবাইকেই এগিয়ে আসতে হবে। এখানে কোনও রকম ভুল বোঝাবুঝি, দলের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখা ভুলে দলের পাশে দাঁড়াতে হবে। সবাইকে নিয়ে চললে এই লক্ষ্যপূরণ সম্ভব। আমি সেই নির্দেশই পালন করছি মাত্র।’ অনুপম এও জানান, তাঁকে বীরভূমের গ্রামেগঞ্জে গিয়ে সংগঠন সামলানোর জন্যও দেওয়া হয়েছে নির্দেশ। ‘মোদী, অমিত জি, এঁরা সকলেই ভূমিস্তর থেকে সংগ্রাম করে উঠে এসেছেন। আমাদেরও মাটির কাছাকাছি থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
উল্লেখ্য পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির সাংগঠনিক দৌর্বল্য, গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, পুরনো কর্মীদের বসে যাওয়া, বাড়িয়ে-চড়িয়ে রিপোর্ট দেওয়া নিয়ে বেশ ক্ষুব্ধ কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। এ নিয়ে রাজ্য নেতৃত্বের কাছে অসন্তোষ জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। এখানে অন্যতম প্রধান সমস্যা রূপে দেখা দিয়েছে দলের একটি বড় সংখ্যক কর্মী সমর্থকদের ‘হতাশ’ হয়ে ‘সরে দাঁড়ানো’ বা ‘বসে যাওয়া’৷ দলের প্রতি ক্রমশ আস্থা হারানো এই অনুগত সৈনিকদের আবারও মূলস্রোতে ফেরাতে মরীয়া বিজেপি নেতৃত্ব। যথাযথ জন সংযোগ, সমন্বয় সাধন, ‘নিস্ক্রিয়’দের ব্যক্তিগত ক্ষোভ, অনুযোগ ও আক্ষেপের কথা জেনে তা নিরাময়ের চেষ্টা করাই হবে অনুপমের প্রধান কাজ, জানা গেছে দলীয় সূত্রে৷ অনুপমের দাবি, কেন্দ্রীয় নির্দেশ মেনে সেই কাজ তিনি শুরু করে দিয়েছেন। দলকে পাঠানো নিরপেক্ষ রিপোর্টের মধ্যেই কতজন তথাকথিত ‘নিস্ক্রিয়’ প্রদেশ বিজেপি নেতাকে ‘সক্রিয়’ করে তৃণমূল বিরোধী আন্দোলনের মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনতে পারেন অনুপম, এখন তাই দেখার অপেক্ষা।