শিলিগুড়ি: টাকার লোভেই অরবিন্দপল্লির আবাসনে খুন করা হয়েছিল অরবিন্দপল্লির মহিলা শাড়ি ব্যবসায়ীকে। বৃহস্পতিবার এই ঘটনায় ২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ধৃতদের মধ্যে ওই আবাসনের নীচে থাকা একটি ওষুধের দোকানের মালিক ও ক্যুরিয়ারের এক কর্মী রয়েছে। দোকান মালিকের নাম রাজীব মজুমদার। ক্যুরিয়ার কর্মীর নাম রোহিত ডাকুয়া। শিলিগুড়ি পুলিশের ডেপুটি কমিশনার অভিষেক গুপ্তা জানিয়েছেন, ধৃতরা জেরায় প্রাথমিকভাবে মহিলাকে খুনের কথা স্বীকার করেছে।
গত ১৯ অগাস্ট শিলিগুড়ি পুরনিগমের ২২ নম্বর ওয়ার্ডের অরবিন্দপল্লি এলাকায় নিজের আবাসনে খুন হন সোমা সরকার নামে ওই মহিলা। মহিলা ফ্ল্যাটে একাই থাকতেন। খুনের পরই পুলিশ দেখে যে মহিলার ফ্ল্যাট থেকে কিছু সোনার গয়না ও টাকা খোয়া গিয়েছে। এরপরই তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, খুনের আগের রাতে শাড়ি কেনার নাম করে এক পরিচিতকে নিয়ে মহিলার ফ্ল্যাটে গিয়েছিল অভিযুক্ত রাজীব মজুমদার। ওই ফ্ল্যাটের নীচেই সাত-আট মাস আগে ওষুধের দোকান দিয়েছিল রাজীব। এরপর রাজীবের গতিবিধির উপর নজর রাখতে শুরু করে পুলিশ। অভিযুক্তের মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন, কল ডিটেল খতিয়ে দেখেই বাজিমাত করে ফেলে পুলিশ।
তদন্তকারীরা বুঝে যান, ঘটনার দিন সকালেও অভিযুক্তরা মহিলার ফ্ল্যাটে গিয়েছিল। এমনকি খুনের পর দোকানে এসে ঘুমিয়েও ছিল মূল অভিযুক্ত রাজীব। এরপরই পুলিশ বৃহস্পতিবার দুজনকে গ্রেপ্তার করে। ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদের পর পুলিশ জানতে পারে রোহিত ডাকুয়া নিজের অফিস থেকে প্রচুর টাকা লোন নিয়েছিল। রাজীবেরও ব্যবসার কারণে অনেক টাকা ঋণ ছিল। তাঁরা কোনওভাবে খবর পেয়েছিল মহিলার ফ্ল্যাটে নগদ টাকা ও গয়না রয়েছে।
সেইমতো খুনের পরিকল্পনা করে আগের রাতে মহিলার বাড়িতে যায় অভিযুক্তদের দুজনই। তখনই খুন করে লুঠের পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু ওই সময় আবাসনে লোকজন চলাচল করায় খুন করতে পারেনি। তাই পরের দিন সকাল ৮টা ২০ মিনিট নাগাদ রোহিতের ফোন আসে রাজীবের কাছে। সেই ফোন পাওযার পরেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে পরে সে। এরপর ৮টা ৩০ মিনিট নাগাদ চলে আসে মহিলার আবাসনে। শাড়ি কেনার নাম করে ভেতরে ঢোকে। ঘরে ঢুকেই বাইরের দরজা একজন আটকে দেয়। এরপর যে ঘরে ব্যবসার সামগ্রী রাখা থাকে সেই ঘরে মহিলার পরনের কাপড় গলায় জড়িয়ে খুন করা হয়। একজন ওই সময় মহিলার মুখ চেপে ধরেছিল। খুন করার পর দেহ নিয়ে এসে বিছানায় শুইয়ে দেয়। প্রমাণ লোপাটের লক্ষ্যে ওই ঘর এবং পাশের ঘর গুছিয়ে দেয় অভিযুক্তরা। এরপর আলমারি খুলে নগদ টাকা এবং সোনার গয়না নিয়ে ৯টা নাগাদ বেরিয়ে যায় আবাসন থেকে। এরপর ধৃত দুজন ওই টাকা দিয়ে নিজেদের ধার দেনা মেটায় বলে জেরায় তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন। কোথায় কোথায় টাকা মেটানো হয়েছে তার খোঁজ শুরু হয়েছে।
এদিকে, পুলিশের কাজের প্রশংসায় পঞ্চমুখ মৃতার পরিবার। মৃতার মেয়ে কর্ণিয়া সরকার বলেন, ‘আমরা ভাবতেও পারিনি মাকে এভাবে খুন হতে হবে। পুলিশ খুব ভালো কাজ করেছে। দ্রুততার সঙ্গে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করেছে।’