ভাস্কর বাগচী, শিলিগুড়ি: দেবদাস। বাঙালির আবেগের আইকন। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা কালজয়ী এই উপন্যাস পড়ে বাঙালি যে কতবার চোখের জল ফেলেছে তা গুনে বলা মুশকিল। সেই বাঙালি রবিবারও ফের চোখের জল ফেলল। চুনীলাল এই উপন্যাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। সেই চুনীলালকে মঞ্চে অন্তর্বাস পরা অবস্থায় দেখলে নাট্যমোদীদের চোখে জল আসাটাই স্বাভাবিক। শুধুই কি তাই! মুহুর্মুহু চটুল হিন্দি গান, ক্যাটকেটে আলোর ঝলকানি, ডিমনিটাইজেশনের উল্লেখ, যৌনকর্মীদের জিএসটি সহ পারিশ্রমিক দাবি, প্রেমের নামে রগরগে যৌনতার প্রদর্শন… রাগের চোটে সবার চোখে জল টলটল। রবিবার শিলিগুড়ির (Siliguri) দীনবন্ধু মঞ্চে দমদম ব্রাত্যজনের প্রযোজনা ‘দেবদাস’ দেখার পর থেকেই শিলিগুড়ি ক্ষোভে ফুঁসছে।
শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু (Bratya Basu) এই নাটকটির সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে। তবে তাই বলে শিলিগুড়ি এই নাটকের সমালোচনা করতে বিন্দুমাত্র পিছপা হয়নি। সোশ্যাল মিডিয়া তাঁদের স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদের সাক্ষী। নাটকের পরিচালক প্রান্তিক চৌধুরী অবশ্য বলছেন, ‘সময়ের পরিবর্তনে দেবদাসের কিছু পরিবর্তন হয়েছে। নাটকে আমরা সেটাই দেখিয়েছি। সেটাই হয়তো কিছু দর্শক মেনে নিতে পারেননি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সৃষ্টিকে নিয়ে কিছু পরিবর্তন মেনে নেওয়া গেলেও শরৎচন্দ্রের সৃষ্টিকে কোনওমতেই বদলানো যায় না বলেই হয়তো তাঁদের মনে হয়েছে।’
উত্তরবঙ্গ সাংস্কৃতিক পরিষদের আয়োজনে শিলিগুড়িতে নাট্যোৎসব চলছে। সেই উৎসবের প্রথম নাটক হিসেবেই রবিবার দীনবন্ধু মঞ্চে ‘দেবদাস’ মঞ্চস্থ হয়। দেবদাসকে নিয়ে বহু সিনেমা হয়েছে। কিন্তু নাটক? সম্ভবত সেভাবে নয়। দমদম ব্রাত্যজনের এই প্রযোজনা বেশ পুরোনো। নামী সংস্থার ব্যানার হওয়ায় এই নাটকটিকে নিয়ে সবারই বেশ আগ্রহ ছিল। পাশাপাশি ‘ব্রাত্যর নাটক’ ধরে নিয়েও অনেকে তা দেখতে গিয়েছিলেন। হল হাউসফুল। শুরুর দিকে সব ঠিক। খানিক পর থেকেই কিন্তু ছন্দপতনের শুরু। মনের মধ্যে রাগের মাত্রা বাড়তে থাকলেও শো চলাকালীন কেউ কোনও প্রতিবাদ করেননি। কিন্তু নাটক শেষে কলাকুশলীদের পরিচয়পর্ব চলাকালীন সেই ক্ষোভ চাপা থাকেনি। দলের কলাকুশলীদের লক্ষ করে এক দর্শক বলেই ফেললেন, ‘এমন এক নাটকে শরৎচন্দ্রের নামটা ব্যবহার না করলেই পারতেন।’ সেই শুরু। এরপর একের পর এক মন্তব্য, ‘নাটক দেখে ভালো লাগল না’, ‘কেন শিলিগুড়িতে আপনারা এমন নাটক নিয়ে এলেন?’ মঞ্চের আলোয় আলোকিত কলাকুশলীদের মুখে তখন অস্বস্তি প্রকট।
শিলিগুড়ির নাট্য ব্যক্তিত্ব পার্থপ্রতিম মিত্র বললেন, ‘এটি সবার সঙ্গে দেখার নাটক নয়। অনেকে মাঝপথেই উঠে গিয়েছিলেন। নাটক শেষে কেউ একবার হাততালিও দেননি।’ তাণ্ডব মুখোপাধ্যায় সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, ‘এই নাটকের নাম আধুনিক দেবদাস রাখা উচিত।’ নাট্যব্যক্তিত্ব রতন নন্দী থেকে সূর্য সেন কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পার্থসারথি দাস, সবাই নিন্দায় মুখর। নাট্যব্যক্তিত্ব পার্থ চৌধুরী বললেন, ‘নাটকের নামে যা হল তা স্রেফ ছ্যাবলামো।’