পূর্ণেন্দু সরকার, জলপাইগুড়ি: জলপাইগুড়ি শহরের নাট্যকার প্রসূন দাশগুপ্তের শর্ট ফিল্ম (Short Film) ‘কালের কাহিনী’ যাচ্ছে নন্দনে সুতানুটি শর্ট ফিল্ম ও ডকুমেন্টারি ফিল্ম ফেস্টিভালে। মাত্র ৯ মিনিট ৩২ সেকেন্ডের এই শর্ট ফিল্মে বুড়ো বাবা-মায়ের প্রতি ছেলে ও বৌমার দায়িত্বজ্ঞানহীনতার মতো সামাজিক সমস্যাকে তুলে ধরা হয়েছে। আগামী ১৮ জানুয়ারি কলকাতার নন্দন প্রেক্ষাগৃহে এই ছবি প্রদর্শিত হবে।
ছেলের বিদেশে পড়াশোনার জন্য বাবা-মাকে এক ব্যাংক ম্যানেজার বিরাট অঙ্কের ঋণের ব্যবস্থা করে দেন। ছেলে ঋণের টাকায় বিদেশে পড়াশোনা শেষ করে চাকরি পেয়ে সেখানে বিয়েও করেন। ছেলের জন্য নেওয়া ঋণের টাকা পরিশোধ করে বাবা-মা বিদেশে ছেলের কাছে থাকতে যান। কিন্তু কয়েকদিন পর বাবা-মা দেশে ফিরে আসেন। ছেলে ও বৌমা তাঁদের ফিরিয়ে দেন। অনেক পরে ব্যাংক ম্যানেজারের কাছে ঋণের জন্য কৃতজ্ঞতা জানাতে ছেলে ও বৌমা আসেন কিছু উপহার নিয়ে। কিন্তু ব্যাংক ম্যানেজার জানান, তাঁদের বাবা-মায়ের দুই চোখের দু’ফোঁটা জল আগেই পেয়েছেন। সেটাই সবচেয়ে বড় উপহার। ‘কালের কাহিনী’র নির্দেশনা ও চিত্রনাট্য লিখেছেন নাট্যকার প্রসূন দাশগুপ্ত। তিনি বলেন, “আজকের সমাজে বাবা-মায়েদের এইভাবেই ছেলেমেয়ের জন্য অর্থের বোঝা কাঁধে নিয়ে এই জীবন থেকে চলে যেতে হয়। অধিকাংশ সন্তানই বাবা-মা’র প্রতি দায়িত্বশীল হন না। ছোট থেকে চাকরি পাওয়া পর্যন্ত বাবা-মা কত কী করে থাকেন ছেলেমেয়ের জন্য। অথচ পরে সন্তানরা সব ভুলে যান।” যৌথ পরিবার ভেঙে গিয়েছে। এই সামাজিক দূষণ আজ পারিবারিক জীবনে বড় ক্ষতি হয়েই দাঁড়িয়েছে। বাবা-মাকে বুড়ো বয়সে সন্তানরা ঘুরেও দেখেন না। এই সামাজিক সমস্যা কবে দূর হবে জানা নেই, তবে কালের কাহিনী একটা প্রতিবাদ বলে জানান প্রসূন।
কালের কাহিনীর প্রযোজক সোহম চক্রবর্তী মনে করেন, খুবই প্রাসঙ্গিক সামাজিক বিষয়কে তুলে ধরা হয়েছে। প্রসূন দাশগুপ্তের বন্ধু প্রদীপ গঙ্গোপাধ্যায় জানান, উৎসব শেষে ছবিটির সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে সমস্ত প্রজন্মের প্রতিক্রিয়া নেওয়া উচিত। শেষ বয়সে বৃদ্ধাশ্রম নয়, ছেলে বাবা-মায়ের দায়িত্ব এড়াতে পারেন না, এটা তাঁদের বুঝতে হবে।
কালের কাহিনীতে অভিনয় করেছেন জেলার ছেলেমেয়েরাই। সাগ্নিক ভট্টাচার্য, অর্কমিত্রা মজুমদার, সোনালি সিং, তমালিকা মিশ্র প্রমুখ। চিত্রগ্রহণ করেছেন সুবীর রায়, আবহসংগীতে দেবলীনা চক্রবর্তী। সংগীত পরিচালক জয়দেব রায়চৌধুরী। সাহিত্যিক অশোক গঙ্গোপাধ্যায়ের উপহার নামে ছোটগল্প থেকে নিজে চিত্রনাট্য লিখেছেন প্রসূন দাশগুপ্ত।