বর্ধমানঃ নেশায় আশক্ত (intoxicated son) ছেলের অত্যাচারে ওষ্ঠাগত হয়ে উঠেছিল জীবন। ছেলের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে শেষমেষ নিজের ছেলেকেই নৃশংসভাবে খুন (brutally murdered) করলেন বাবা। এমনই চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বরের মূলগ্রামে। নিহত ছেলের নাম নূর ইসলাম শেখ(২৪)। তাঁকে খুনের দায়ে মন্ত্বেশ্বর থানার পুলিশ বাবা নূর নবি শেখকে গ্রেপ্তার করেছে। এহেন খুনের ঘটনার কথা জেনে শুধু প্রতিবেশীরাই নয় পুলিশ কর্তারাও স্তম্ভিত।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, যুবক নূর ইসলামের বাড়ি মন্তেশ্বরের মূলগ্রামে। পরিবার সদস্যরা জানান, ‘নূর ইসলাম একসময় কলকাতায় কাঠমিস্ত্রীর কাজ করতেন। কিন্তু সেখানে তাঁর মন বসেনি। তাই প্রায় ৯-১০ মাস আগে নূর সেই কাজ ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসে। তারপর থেকে সে তার মা সেরিনা বেগম ও বাবা নূর নবি শেখের কাছেই থাকতে শুরু করেন। তাঁর একটি মাত্র বোন থাকলেও কয়েকমাস আগে যুবকের বিয়ে দেয় পরিবার। শনিবার সকালে বাড়ির একটি ঘরের মেঝেতে রক্তাক্ত ও ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায় নূর ইসলামকে। ছেলেকে এমন অবস্থায় দেখে কান্নাকাটি করতে থাকেন মা। প্রতিবেশীদের মাধ্যমে সেই খবর পেয়ে মন্তেশ্বর থানার পুলিশ নূর নবি শেখের বাড়িতে যায়। পুলিশ যুবকের মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠায়।
কিন্তু কিভাবে যুবকের এমন মর্মান্তিক পরিণতি হল তা নিয়ে ধোঁয়াশায় ছিল পুলিশ। পরে যদিও পুলিশ মৃত যুবকের মা ও বাবাকে থানায় তুলে নিয়ে গিয়ে জেরা শুরু করে করে। টানা জেরার মুখে পড়ে ছেলেকে খুন করার কথা স্বীকার করে নেয় তার বাবা নূর নবি।
পুলিশকে নূর নবি জানান, তাঁর ছেলে প্রতিদিনই গাঁজা, মদের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকত। এমনকি ছেলে গাঁজা বিক্রি করছে বলেও তিনি অভিযোগ পেতেন। নূর নবি পুলিশকে এও জানান, তাঁর ছেলে প্রতিদিনই তাঁর কাছে এবং তাঁর স্ত্রীর কাছে নেশার টাকা চাইতো। টাকা না দিলেই ছেলে তাঁদের ব্যাপক মারধোর করত। নূর নবি দাবি করেন, কয়েকমাস আগেই তাঁর ছেলে তাঁকে মেরে মাথা ফাটিয়ে দেয়। ইদানিং চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছায় ছেলের সেই অত্যাচার। শুক্রবার গভীর রাতে বাড়ি ফিরে নূর ইসলাম একই রকম অত্যাচার শুরু করে। ছেলের সেই অত্যাচার আর সহ্য করতে না পেরে শেষপর্যন্ত তিনি হাতুড়ি ও পাথরের নোড়া দিয়ে থেঁতলে তাঁর ছেলেকে খুন করেন। মৃত্যু নিশ্চিত করতে একাধিকবার ভারী জিনিস দিয়ে ছেলের মাথায় আঘাত করা হয়। এমন কথাও পুলিশের কাছে স্বীকার করেন নূর নবি। এরপরেই পুলিশ নূর নবিকে গ্রেপ্তার করে হত্যায় ব্যবহৃত রক্ত মাখা হাতুড়ি ও নোড়া উদ্ধার করেছে।