বর্ধমান: মাতৃগর্ভে থাকা যমজ সন্তানের একটি গর্ভেই মারা যায়। সেই মৃত সন্তানকে প্রসব করিয়ে টানা ১২৫ দিন প্রসূতির চিকিৎসা চালিয়ে সফলভাবে দ্বিতীয় শিশুর জন্ম দিলেন চিকিৎসক। চিকিৎসায় এমন নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত তৈরি করে ‘গিনেস বুকে’ নথিভুক্ত হয়ে থাকা সাফল্যকেও ছাপিয়ে গেল বর্ধমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল। হাসপাতাল সুপার চিকিৎসক তাপস ঘোষ বলেন, ‘শিশু ও প্রসূতি মা দু’জনই সুস্থ রয়েছেন। দেশে এমন ধরণের ঘটনা কমই হয়েছে।’
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রসূতি পম্পা প্রামাণিকের বাড়ি পূর্ব বর্ধমান জেলার জামালপুর থানার কুলীনগ্রামে। প্রথম থেকেই তাঁর সন্তান প্রসবে সমস্যা ছিল। তাঁর প্রথম টেস্টটিউব বেবি নেওয়ার প্রচেষ্টা ২০১৬ সালে ব্যর্থ হয়। তারপর তিনি কলকাতার বিভিন্ন নার্সিংহোমে গেলেও কোনও লাভ হয়নি। চলতি বছরের জুলাই মাসে একইভাবে টেস্টটিউবে সন্তান প্রসবের চেষ্টা করেন তিনি। তিনি গর্ভে যমজ সন্তান ধারণ করেন। কিন্তু অন্তঃসত্বা হওয়ার পর ১১ জুলাই ১৭ সপ্তাহের মাথায় রক্তক্ষরণ শুরু হলে তিনি বর্ধমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি হন। পরদিন ১২ জুলাই প্রসূতি বিভাগে একটি মৃত সন্তান প্রসব করেন তিনি। এরপর পরস্থিতি আরও জটিল হয়ে যায়। অনাগত দ্বিতীয় সন্তান গর্ভে থেকেই যায়। এই দ্বিতীয় সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তায় পড়েন চিকিৎসকরা। তবুও সাধারণ পরিকাঠামো নিয়েই বর্ধমান হাসপাতালের চিকিৎসকরা লড়ে যান। তাঁরা কোনও ঝুঁকি না নিয়ে প্রসূতিকে পর্যবেক্ষণে রাখার সিদ্ধান্ত নেন। কঠোর নিয়মের মধ্যে টানা ১২৫ দিন হাসপাতালেই ভর্তি ছিলেন প্রসূতি। দু’দিন আগে অর্থাৎ মঙ্গলবার শিশু দিবসের দিন ১২৬ দিনের মাথায় প্রসূতি যমজ শিশুর দ্বিতীয়টির জন্ম দেন। চিকিৎসকদের দাবি, শিশুটির ওজন হয়েছে ২ কেজি ৯০৬ গ্রাম।
বর্ধমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল প্রসূতি বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মলয় সরকার বৃহস্পতিবার বলেন, ‘প্রসূতির বয়স ৪১ বছর। জরায়ুতে তাঁর একটি শিশুর মৃত্যু হয়েছিল। তারপর অন্য একটির জন্ম দেওয়াটা খুবই ঝুঁকির হয়ে যায়। কারণ, এই সময়ে সংক্রমণের ব্যাপক ভয় থাকে। পরিণত হওয়ার জন্য শিশুর প্রয়োজনীয় সময়ও লাগে। এক্ষেত্রে সময়টা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের বিশেষ কিছু স্টেপ নিতে হয়েছে। সর্বোপরি আমরা বর্ধমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের চিকিৎসকরা অসাধ্যসাধন করতে সক্ষম হয়েছি। শিশু ও প্রসূতি দু’জনই সুস্থ রয়েছেন।’
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, এই গোটা প্রক্রিয়ায় ছিলেন চিকিৎসকদের নিয়ে গঠিত একটি দল। প্রসূতি বিভাগের মলয় সরকার ছাড়াও এস পি রায়চৌধুরী, দেবব্রত রায়, কৃষ্ণপদ দাস, অর্পিতা প্রামাণিক, শিশু বিভাগের চিকিৎসক মুকুট বন্দ্যোপাধ্যায়, অ্যানাস্থেশিয়া বিভাগের সুমন্ত ঘোষ মৌলিকদের নিয়ে গঠিত মেডিকেল টিম এই কাজটি করেন। বোর্ডের দাবি, ১৯৬৬ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাল্টিমোর শহরে এই ধরণের একটি ঘটনায় ৯০ দিন পর দ্বিতীয় শিশুটিকে সফলভাবে প্রসব করানো হয়। এই ঘটনা গিনেস বুকে রেকর্ড আছে। মেডিকেলে চিকিৎসকদের দাবি, তাঁরা ১২৫ দিনের পর প্রসব করিয়ে গিনেস বুকের রেকর্ডকে ছাপিয়ে গিয়েছেন। বর্ধমান মেডিকেল হাসপাতালের সুপার তাপস ঘোষ বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালের চিকিৎসকরা অসাধ্যসাধন করেছেন।’ শিশুর বাবা অনুপ প্রামাণিক বলেন, ‘বর্ধমান হাসপাতালের ডাক্তারদের জন্যই ছেলেকে পেলাম। ডাক্তাররা ছেলের যে নাম রাখবেন আমি সেই নামই রাখব, যাতে সারাজীবন এভাবে সন্তানকে পাওয়াটা স্মরণীয় হয়ে থাকে।’