বর্ধমান: টেস্ট পরীক্ষার ফল প্রত্যাশামতো হয়নি বলে হাল ছেড়ে দেয়নি শুভম পাল। উলটে আরও মনোযোগ সহকারে পাঠ্যবই খুঁটিয়ে পড়া শুরু করে। আর পাঠপুস্তক খুঁটিয়ে পড়েই এ বছরের মাধ্যমিকের মেধা তালিকায় বাজিমাত করল বর্ধমান মিউনিসিপাল হাইস্কুলের ছাত্র শুভম। ৬৯১ নম্বর পেয়ে যুগ্মভাবে সে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে। গরিব মানুষকে নিঃস্বার্থে চিকিৎসা পরিষেবা দিতে শুভম ডাক্তার হতে চায়।
বর্ধমান শহরের ছোট নীলপুর শ্রীপল্লী এলাকায় বাড়ি শুভম পালের। তাঁরা পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলীর পারুলিয়া এলাকার আদি বাসিন্দা। বাবা সমীর পাল কলকাতায় একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করেন। মা স্বপ্নাদেবী রায়নার পাইটা স্কুলের বাংলার শিক্ষিকা। শুভম জানিয়েছে, মাধ্যমিকে তার ভালো ফল হওয়ার পিছনে যাঁর অবদান সব থেকে বেশি, তিনি হলেন তার মা। এদিন রেজাল্ট হাতে পাওয়ার পর শুভম জানায়, সে বাংলায় ৯৯, ইংরেজিতে ৯৬, ইতিহাসে ৯৬ নম্বর পযেছে। বাকি সব সাবজেক্টে একশোয় একশো পেয়েছে। একমাত্র সন্তান মাধ্যমিকে এমন অভাবনীয় ফল করায় খুশি সমীরবাবু ও স্বপ্নাদেবী।
রেজাল্ট জানার পর বাবা-মাকে পাশে নিয়ে শুভম এদিন জানায়, রেজাল্ট ভালো হবে এই আশা ছিল। তবে একেবাবে দ্বিতীয় স্থান, এতটা আশা করেনি সে। এমন অভাবনী রেজাল্ট করতে পারার জন্য বাবা মায়ের পাশাপাশি স্কুল শিক্ষক ও প্রাইভেট শিক্ষকদের কৃতজ্ঞতা জানাতে ভোলেনি শুভম। মাধ্যমিকে এত ভালো ফল করার চাবিকাঠি কী? উত্তরে শুভম জানায়, কোনও নির্দিষ্ট সময় করে সে পড়াশোনা করত না। যখন মন চাইতো তখনই পড়তে বসত। এছাড়াও রোজ স্কুলে যাওয়া, প্রাইভেট টিউটরের কাছে পড়া এসবতো ছিলই। তারই মধ্যে সবথেকে বেশি সে গুরুত্ব দিয়েছে, প্রত্যেকটি বিষয়ের পাঠ্যবই খুঁটিয়ে পড়ার ব্যাপারে। পাঠ্য বই খুঁটিয়ে পড়লে সাফল্য মিলবেই বলে দাবি করেছে শুভম।
রবীন্দ্র সংগীতের ভক্ত শুভম জানিয়েছে, সে আরও লেখাপড়া শিখে বড় ডাক্তার হতে চায়। শুভমের ডাক্তার হতে চাওয়ার পিছনেও রয়েছে বিশেষ এক উদ্দেশ্য। সে জানায়, গরিব মানুষ অর্থের অভাবে চিকিৎসা করাতে পারেন না। রোগ যন্ত্রনায় কষ্ট পান। অনেকে মারাও যান। এই বিষয়টি তাঁকে ব্যথিত করে। তাই সে বড় ডাক্তার হয়ে নিঃস্বার্থভাবে গরিব মানুষকে চিকিৎসা পরিষেবা দিতে চায়। সমীরবাবু এবং স্বপ্নাদেবী জানান, ছেলের ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন পূরণে তাঁরাও সাথী হতে চান।
শুভম ছাড়াও বর্ধমান মিউনিসিপাল হাই স্কুলের আরও ছয় ছাত্র প্রথম দশে রয়েছে। তাদের মধ্যে ৬৮৯ নম্বর পয়ে চতুর্থ হয়েছে অর্ক বন্দ্যোপাধ্যায়, ৬৮৮ পেয়ে পঞ্চম হয়েছে শেখ সায়িদ ওয়াশিফ, ৬৮৭ নম্বর পেয়ে ষষ্ঠ হয়েছে প্রনীল যশ, ৬৮৩ নম্বর পেয়ে দশম হয়েছে এই একই স্কুলের তিন ছাত্র ঈশান চন্দ্র বর্মন, দেবরাজ হাজরা ও অর্খদীপ গোস্বামী। এছাড়ও বর্ধমানে সিএমএস হাইস্কুলের ছাত্র রুপায়ন পাল ৬৮৮ নম্বর পেয়ে পঞ্চম স্থান লাভ করেছে এবং ৬৮৫ নম্বর পেয়ে অষ্টম স্থান লাভ করেছে শেখ আফিফ জাহিন। পাশাপাশি পূর্ব বর্ধমানের আমড়াগড় হাইস্কুলের ছাত্রী ঈশিতা ভট্টাচার্য ৬৮৪ নম্বর পেয়ে নবম এবং একই স্কুলের পড়ুয়া অঙ্কুর ঘোষ ৬৮৩ নম্বর পেয়ে দশম স্থান লাভ করেছে। সাফল্য এখানেই থেমে নেই। ৬৮৪ নম্বর পেয়ে জেলার সুলতানপুর তুলসী দাস বিদ্যামন্দিরের ছাত্রী শবনম পারভিন নবম স্থান লাভ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। এদিন কৃতীদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। মন্ত্রীর কথায়, এই ছাত্র-ছাত্রীরা সবাই জেলার গর্ব।