বর্ধমানঃ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলে ছাত্র মৃত্যুর ঘটনায় তোলপাড় হয় গোটা বাংলা। বহিরাগতদের র্যাগিং-এর কারণেই ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ। এই ঘটনার পর তা নিয়ে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়েও কম হইচই হয় নি। তবুও এখনও ৭১ জন অনুমোদনহীন পড়ুয়া রয়েছে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেল গুলিতে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘স্টুডেন্ট ও প্লেসমেন্ট’ বিভাগের আধিকারিক অরিজিৎ আঢ্য সোমবার হস্টেল সংক্রান্ত বৈঠকে এই রিপোর্ট পেশ করেছেন। সেই রিপোর্ট পাওয়ার পরেই অনুমোদনহীন পড়ুয়াদের সাত দিনের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেল ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছেন উপাচার্য্য। এ নিয়ে বিরোধী ছাত্র সংগঠন ও কর্মী ইউনিয়নগুলি দাবি করেছে, অবৈধভাবে হস্টেলে থাকা পড়ুয়াদের তথ্য এতদিন ‘স্টুডেন্ট ও প্লেসমেন্ট’ বিভাগ ’চেপে’ রেখেছিল। শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতির চাপে স্টুডেন্ট ও প্লেসমেন্ট’ বিভাগ সত্যিটা সামনে নিয়ে আসতে বাধ্য হল।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সপ্তাহ খানেক আগে হস্টেল সংক্রান্ত বৈঠক চলাকালীন উপাচার্যের ঘরের সামনে বিক্ষোভ দেখায় আবাসিকরা। তাদের মধ্যে কয়েকজন ওই দিন উপাচার্যের সঙ্গে অভব্য ব্যবহার করে বলেও অভিযোগ। তা নিয়ে ক্ষুব্ধ উপাচার্য খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, তাঁর সঙ্গে যাঁরা ওইদিন অভব্য ব্যবহার করেছিল তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া হলেও হস্টেলের অনুমোদিত আবাসিক নয়। তবুও তারা হস্টেলের ঘর দখল করে রয়েছে। শুধু তাই নয়, যাদবপুর কাণ্ডের পর জেলার পুলিশ সুপারকে চিঠি লিখে কয়েকজন আবাসিক জানায়, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যলয়ের নেতাজী ও চিত্তরঞ্জন হোস্টেলে ৩০-৩৫ জন করে ‘অনুমোদনহীন’ আবাসিকরা রয়েছেন। এইসব বিষয়গুলি সামনে আসার পর উপাচার্য কড়া ভাবেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ’স্টুডেন্ট ও প্লেসমেন্ট’ বিভাগের আধিকারিক অরিজিৎ আঢ্যকে হোস্টেলের বিস্তারিত রিপোর্ট দিতে বলেন। সেই রিপোর্টে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে ছেলেদের ছ’টি ও মেয়েদের পাঁচটি হস্টেল রয়েছে। ছেলেদের হস্টেলগুলির মতো মেয়েদের হস্টেলেও ‘অবৈধ’ আবাসিক রয়েছে। সব মিলিয়ে অবৈধ আবাসিকের সংখ্যা ৭১ জন বলে রিপোর্টে জানানো হয়েছে।
উপাচার্য গৌতম চন্দ্র এদিন বলেন, “অনুমোদনহীন আবাসিকদের সাত দিনের মধ্যে হস্টেল ছাড়তে বলে দেওয়া হয়েছে। হস্টেলের মেস কমিটিকেও এই ব্যপারে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। সাত দিনের মধ্যে অনুমোদনহীন আবাসিকরা হোস্টেল না ছাড়লে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এ নিয়ে বিরোধী ও কর্মচারী ইউনিয়নের বক্তব্য, “সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে ‘স্টুডেন্ট ও প্লেসমেন্ট’ বিভাগ জানিয়েছিল, হস্টেলগুলিতে নাকি অবৈধ আবাসিক নেই। আর এখন প্রমাণ হয়ে গেল সত্য আড়াল করতে তখন ’স্টুডেন্ট ও প্লেসমেন্ট’ বিভাগ ‘ভুল’ রিপোর্ট কর্তৃপক্ষকে দিয়েছিল, যার জন্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখ পোড়ে। শেষে আসল সত্য সামনে আসার পর উপাচার্য্য সঠিক পদক্ষেপ নিয়েছেন“। অরিজিৎ আঢ্য যদিও এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চান নি।
এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদক অনির্বাণ রায়চৌধুরি বলেন, “টিএমসিপি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আধিকারিকদের একাংশের মদতেই হস্টেলের ঘর দখল থাকছে বহিরাগতদের হাতে। সে কারণেই মিথ্যা রিপোর্ট দেওয়া হচ্ছিল। আমাদের চাপে পড়ে কিছুটা নড়েছে কর্তৃপক্ষ।” এবিভিপির বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতা রাজেন সেনের দাবি, “আমরা আগেই বলেছিলাম, হস্টেলে টিএমসিপির মদতপুষ্টরা থাকেন। সে জন্যে রাজ্যপাল তথা আচার্যকে চিঠি দিয়েছিলাম।” যদিও বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএমসিপি নেতা মণিকাঞ্চন মণ্ডলের দাবি,, “রিপোর্ট ভিত্তিহীন। কেউ ঘর দখল করে নেই। কিসের ভিত্তিতে এই রিপোর্ট তৈরি হল সেটাও কেউ জানে না।”