মণীন্দ্রনারায়ণ সিংহ, আলিপুরদুয়ার: রাস্তার উপরেই কড়াইয়ে গরম তেল টগবগ করছে, রান্না হচ্ছে। বিকেলের পর শহরের লাইফলাইন বিএফ রোডের ব্যস্ত রাস্তায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে কোনও গাড়ি ধাক্কা দিলে ঘটতে পারে ভয়াবহ দুর্ঘটনা। মনোজিৎ নাগ বাস টার্মিনাসের ঢোকার রাস্তার মুখেও একই ছবি দেখা যায় দিনভর। শহরের প্রধান রাস্তার একাংশে ভোরের আলো ফুটতেই জামাকাপড়, ফল থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী রাস্তার একাংশে ফেলে কারবার শুরু হয়। শুধু ফুটপাথ দখল করেই থেমে নেই এরা। রাস্তার একাংশজুড়ে এরকম দোকানপাট বসায় শহরে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক গতিতে চালানো সম্ভব হয় না। প্রবীণ নাগরিকরা তিতিবিরক্ত। রবিবার রাতে শহরের বেলতলা মোড় এলাকায় চায়ের গুমটিতে গাড়ির ধাক্কায় কয়েকজন জখম হয়েছেন। শহরের নাগরিকদের অভিযোগ, সবকিছু দেখেও যেন হুঁশ নেই প্রশাসনের।
আলিপুরদুয়ার ট্রাফিক পুলিশের ডিএসপি শান্তনু দেবনাথ বলেন, ‘ক’দিন হল আমি দায়িত্বভার নিয়েছি। শহরের রাস্তা ফুটপাথ দখলমুক্ত করতে শীঘ্রই পদক্ষেপ করা হবে।’ পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান মাম্পি অধিকারী বলেন, ‘রাস্তা ফুটপাথ দখল করে কোনও কারবার চলতে পারে না। বিষয়টি নিয়ে শীঘ্রই পুরসভা ও প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে।’
আলিপুরদুয়ার শহরের কোর্ট মোড় থেকে চৌপথি পর্যন্ত বিএফ রোডের দু’ধারে প্রতিদিন শতাধিক দোকানপাট বসছে ফুটপাথ ও রাস্তার একাংশ দখল করে। এছাড়াও শহরের আলিপুরদুয়ার কুমারগ্রাম রোডের উপরেই সকালে বাঁশের হাট বসে। ওই রাস্তাজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দখলদারিতে সংকীর্ণ যাতায়াতের সড়ক। শহরের প্রবীণ নাগরিক সন্তোষ সরকার বলেন, ‘রাস্তার উপরে ও ফুটপাথ দখল করে এত দোকানপাট বসছে, শহরের রাস্তায় এখন হাঁটাচলা করতে ভয় হয়। তবে ফুটপাথ ও রাস্তার একাংশ দখল করে কারবারিদের বিভিন্ন মরশুমে ব্যবসার চরিত্র বদলে যায়। পুজো উৎসবের সময় জামাকাপড়, জুতোর দোকানের সংখ্যা অনেক বেশি দেখা যায়। শীত পড়তেই শীতের বস্ত্র, গরমকালে শীতল পানীয়, থেকে রাস্তায় ডাব, ফলের দোকাদের রমরমা কারবার চলতে থাকে।’
শহরের বাসিন্দারা বলছেন, প্রশাসন কড়া মনোভাব না দেখানোয় রাস্তা দখল করে দিনদিন ওই হকার ও কারবারিদের সংখ্যা বেড়ে গিয়েছে। কিছু স্থায়ী দোকান মালিকও তাদের দোকানের সামনে ফুটপাথের একাংশ দখল করে পসরা সাজিয়ে রাখছে। এহেন পরিস্থিতিতে শহরের রাস্তা যেন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। আলিপুরদুয়ার টাউন ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি রানা চক্রবর্তী বলেন, ‘রাস্তার একাংশ ও ফুটপাথ দখল করে কেউ কারবার করুক এটাকে সংগঠন কোনওভাবেই সমর্থন করে না। বেআইনি ওই ধরনের কার্যকলাপের বিরুদ্ধে প্রশাসনকে সবরকমভাবে সহযোগিতা করা হবে।’