সুভাষ বর্মন, পলাশবাড়ি: একশো বছরেরও বেশি সময় ধরে যোগেন্দ্রনগরে শিবপুজোর আয়োজন করা হয়। স্থানীয়দের বিশ্বাস, এখানে মনস্কামনা করলে সেটা অবশ্যই পূরণ হবে। স্থানীয় এক জোতদারের পরিবার পুজোর আয়োজন করলেও উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পুণ্যার্থীদের ঢল নামে। শুক্রবারও তার ব্যতিক্রম হবে না বলে মনে করছেন আয়োজকরা। পুজো উপলক্ষ্যে শনিবার মেলা বসবে। স্থানীয় বাসিন্দা নারায়ণ সরকার বললেন, ‘শিববাড়ির ঐতিহ্য এই শিবপুজো ও মেলা। আমরা সবাই এই পুজো ও মেলার সঙ্গে যুক্ত।’
দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে পূর্ব কাঁঠালবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের ওই এলাকায় যোগেন্দ্র বর্মন নামে এক জোতদার ছিলেন। তাঁর নামেই পরে প্রশাসনিকভাবে মৌজার নাম হয় যোগেন্দ্রনগর। কিন্তু শিব মন্দির থাকার জন্য লোকমুখে শিববাড়ি নামে বেশি পরিচিত।
সনজয় নদীর ধারে গাছতলায় তখনকার দিনে গাঁজার ঠেক বসত। সেখান থেকেই শিবপুজোর শুরু। পরে পাথরের শিবলিঙ্গ বসানো হয়। পাশাপাশি পাথরের পার্বতী, বৃষ ও পিতলের সাপের পুজো একসঙ্গে করা হয়। জোতদারের নাতি সুনীলচন্দ্র বর্মন জানান, আগে এই পুজোকে কেন্দ্র করে তিন-চারদিনের মেলা হত। বিষহরি গান, যাত্রাপালার আসরও বসত। তাঁর কথায়, ‘এখন আর আগের মতো বেশিদিন ধরে মেলা হয় না। শিবচতুর্দশীতে পুজোর পর একদিনের মেলা হয়। এবার এই পুজো ও মেলার ১১৪ বছর।’ তবে এখনও এই পুজোর দায়িত্ব সামলায় ওই জোতদারের পরিবার। পুজো ও মেলার আয়োজনে এলাকার মানুষ সবরকমভাবে সহায়তা করেন। আগেকার সেই পাথরের শিবলিঙ্গ থাকলেও মন্দিরটি সংস্কার করা হয়েছে। ভক্তদের বিশ্বাস, এখানকার শিববাবা জাগ্রত, তাই শিবের কাছে প্রার্থনা করলে মনের ইচ্ছেপূরণ হয়। এলাকার কারও বাড়িতে বিয়ে, অন্নপ্রাশন সহ সামাজিক অনুষ্ঠান থাকলে আগে এই মন্দিরে এসে পুজো দেওয়ার রীতি রয়েছে।
মন্দির দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেন জোতদারের বংশধর কমলেশ বর্মন। তাঁর কথায়, ‘এখনও নিয়মনিষ্ঠা সহকারে পুজো হয়। বলির প্রচলন নেই। তবে ভক্তরা পাঁঠা, পায়রা উৎসর্গ করেন।’ পুজোর রাতভর কীর্তন হয় আর ভক্তদের খিচুড়ি প্রসাদ খাওয়ানো হয়।