প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত, নয়াদিল্লি: মঙ্গলবার দেশের ৭৭তম স্বাধীনতা দিবসে লালকেল্লা থেকে ‘বিশ্বকর্মা’ প্রকল্পের ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেই ঘোষণার চব্বিশ ঘণ্টা পেরোনোর আগেই বুধবার একগুচ্ছ জনমোহিনী প্রকল্পের ঘোষণা করল কেন্দ্রীয় সরকার, যার মধ্যে লালকেল্লায় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা করা ১৩,০০০ কোটি টাকার ‘পিএম বিশ্বকর্মা’ প্রকল্প অন্যতম। এরই পাশাপাশি থাকছে দেশের ১০০টি শহরে ১০,০০০ ই-বাস চালানো এবং ৩২,৫০০ কোটি টাকার বিশেষ রেল পরিকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প। বুধবার কেন্দ্রের তরফে তিনটি প্রকল্প মিলিয়ে ১ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি বরাদ্দের কথা জানানো হয়েছে।
এদিন মোদি সরকারের দুই মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণো এবং অনুরাগ সিং ঠাকুর সাংবাদিক সম্মেলন করে জানান, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য ছোট ছোট শিল্পের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়ার পাশাপাশি তাঁদের কম সুদে সর্বাধিক ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করবে কেন্দ্রীয় সরকার। প্রথম বছরে ৬ লক্ষ পরিবারকে কভার করা হবে এই প্রকল্পে। পাশাপাশি দুই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জানান, এবার দেশের ১০০টি শহরে ১০,০০০ ইলেকট্রনিক বাস চালাবে কেন্দ্রীয় সরকার। ‘প্রধানমন্ত্রী ই-বাস পরিষেবা’ প্রকল্পে মোট প্রয়োজনীয় অর্থের সিংহভাগই দেবে কেন্দ্র, বাকিটা দেবে রাজ্য সরকার। এই পরিবেশবান্ধব বাস প্রকল্পে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত মিলিয়ে মোট ৫৫,০০০ লোকের চাকরি হতে পারে বলে দাবি করা হয়েছে সরকারের তরফে।
তৃতীয় পর্যায়ে এদিন কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে জানানো হয়, দেশের বিভিন্ন প্রান্তের গুরুত্বপূর্ণ রেল পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য এবার খরচ করা হবে ৩২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে থাকছে হাওড়া-দিল্লি মেন লাইনের বিকল্প লাইন তৈরির পরিকাঠামো বিস্তার যেখানে কলকাতা থেকে ভাইজাগ পর্যন্ত থার্ড লাইন বিস্তার করা হবে। একইসঙ্গে শোননগর থেকে অন্ডাল পর্যন্ত বিস্তৃত ডাবল লাইনকে চার লাইনে রূপান্তরিত করা হবে। মূলত এই প্রকল্পে অন্ধ্র প্রদেশ, ঝাড়খণ্ড, তেলেঙ্গানা, পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, মহারাষ্ট্রের মতো ৯টি রাজ্যের ৩৫টি জেলাকে সংযুক্ত করা হবে। এই প্রকল্পে দেশের রেলওয়ে নেটওয়ার্ককে ২৩৩৯ কিমি পর্যন্ত বিস্তৃত করা হবে। তবে রেল মন্ত্রী অবশ্য এদিন আরও একবার স্পষ্ট করেছেন যাত্রী ভাড়ায় বর্তমানে ৫৫ শতাংশ ভর্তুকি বহন করা রেল মন্ত্রক টিকিটে কোনও বাড়তি ছাড় দেবে না। এছাড়াও ২০১৫ সালে চালু হওয়া ১৪,৯০৩ কোটি টাকার “ডিজিটাল ইন্ডিয়া’ প্রকল্পকেও সম্প্রসারিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকারপক্ষ, এর মাধ্যমে দেশের ১২ কোটি মানুষকে সাইবার সুরক্ষার বিষয়ে অবহিত করানো হবে।
কেন্দ্রীয় সরকারের এই ঘোষণাকে চ্যালেঞ্জ জানাতে গিয়ে উঠেপড়ে লেগেছে ইন্ডিয়া জোট। বিরোধী শিবিরের তরফে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন তোলা হয়েছে এই প্রসঙ্গে। প্রথম প্রশ্নেই জানতে চাওয়া হয়েছে, অসমাপ্ত কেন্দ্রীয় প্রকল্প গুলির কী হবে? ‘হর ঘর জল’, ‘মনরেগা’-র মত প্রকল্পের বকেয়া কাজ এবং বরাদ্দ নিয়ে যখন কেন্দ্র-রাজ্য বিবাদ চরমে উঠেছে সেই সময়ে শুধুমাত্র ভোটের কথা মাথায় রেখে জনদরদী প্রকল্পের ঘোষণা কি দেশের ভবিষ্যত উজ্জ্বল করবে?
মোদি সরকারের উদ্দেশ্যে তোপ দেগে তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভা সাংসদ ড. শান্তনু সেন বলেন, ‘এসব অলীক প্রতিশ্রুতি শুনলে এখন হাসি পায়। বিদেশ থেকে কালো টাকা ফেরানো, দেশের নাগরিকদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ করে টাকা প্রদান, বছরে দু কোটি বেকারের চাকরি, নোটবন্দির মাধ্যমে কালো কারবার বন্ধ এবং সন্ত্রাসের উপরে রাশ টানার মতই কেন্দ্রীয় সরকারের এই কল্পতরু ঘোষণা আসলে নির্বাচনি গিমিক ছাড়া আর কিছুই নয়। এর পাশাপাশি সরকারের মূল উদ্দেশ্য হল মণিপুরের ইস্যু থেকে জনতার নজর ঘোরানো। কিছুদিনের মধ্যেই দেশের আমজনতা জল আর স্থলের ফারাক বুঝতে পারবেন।’