Tuesday, October 3, 2023
Homeজাতীয়বাঁদরের দৌরাত্ম্য ঠেকাতে 'হনু' ফ্লেক্সে ভরসা কেন্দ্রের

বাঁদরের দৌরাত্ম্য ঠেকাতে ‘হনু’ ফ্লেক্সে ভরসা কেন্দ্রের

প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত, নয়াদিল্লি: বাঁদররা বরাবর শাহী দিল্লির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ এবং বিপদের কারণও বটে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাঁর ‘মন কী বাত’ দেশবাসীর কাছে তুলে ধরতে ভালবাসেন। কিন্তু দিল্লির ‘মাঙ্কি’রা সমস্ত বাত-চিতের ঊর্ধ্বে। তাঁদের কোন ভাষায় ‘শিষ্ঠাচার’ শেখাবে কেন্দ্র সরকার, জি-২০ সম্মেলনের সময়ে কোন উপায়ে বাগে আনা যায় সমগ্র কপিকুলকে, তা নিয়েই রাতের ঘুম উড়েছে সরকারের।

জি-২০ আন্তর্জাতিক সম্মেলন ঘিরে দিল্লিতে বেধে দেওয়া হয়েছে সাধারণের গতিবিধি, যান চলাচল। ৫ সেপ্টেম্বর থেকে ১৫ তারিখ পর্যন্ত, জি-২০ সম্মেলনকে কেন্দ্র করে কার্যত দুর্ভেদ্য দুর্গে পরিণত হবে দিল্লি, যার প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যেই। কিন্তু দুশ্চিন্তার ‘কালো মেঘ’ ক্রমশ ঘনায়মান শাহী মসনদে। যাদের নিয়ে সরকারের রাতের ঘুম উড়েছে, তারা কোনও সন্ত্রাসবাদী বা বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী নয় বরং তার চেয়েও এককাঠি বেশি। এরা দিল্লির দুর্ধর্ষ কপিকুল অর্থাৎ বাঁদরবাহিনী। পার্লামেন্ট হোক বা পিএমও, ল্যুটিয়েন জোন বা প্রগতি ময়দান; মধ্যদিল্লির বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে কয়েক হাজার বাঁদর ও তাদের পরিবারের দাপট চোখে পড়ার মতো। এরা কোনও সিকিউরিটি মানে না, মানে না প্রোটোকল, চোখ রাঙানি বা মিলিটারি ড্রিল। আপন মর্জির মালিক, বাঁদরদের সর্বত্র অবাধ যাতায়াত। দিল্লির এই দুর্ধর্ষ বাঁদরদের দৌরাত্ম্য থেকে জি-২০ সম্মেলনকে রক্ষা করার জন্য অভিনব কৌশল গ্রহণ করল কেন্দ্রীয় সরকার।

কেন্দ্রীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দিল্লিতে আসন্ন জি-২০ সামিটকে বাঁদরদের হাত থেকে রক্ষা করতে রাজধানী দিল্লির দিকে দিকে ‘হনু-ফ্লেক্স’ অথবা হনুমানের ছবিওলা কাট আউট বাঁদর-খ্যাঁদানো মিমিক হিসেবে লাগানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিউ দিল্লি মিনিউসিপাল কর্পোরেশন(এনডিএমসি) এবং দিল্লি সরকারের অধীন বন ও পরিবেশ দপ্তর। রাজধানীর সাধারণ মানুষের ধারণা, দিল্লির দুর্দমনীয় বাঁদররা যদি কাউকে ভয় পেয়ে থাকে তা হল ‘লাঙ্গুর’দের, উত্তর ভারতে হনুমানদের এই নামেই ডাকা হয়। আর সেই জন্য জি-২০ সম্মেলনের আবহে বাঁদরদের ঠেকাতে এই ‘হনু-ফ্লেক্স’-এ অনেকটা ভরসা রাখছে কেন্দ্র সরকার।

শুধু তাই নয়, ল্যুটিয়েন দিল্লিতে হনু-ফ্লেক্স লাগানোর পাশাপাশি ৪০-৫০ জন বিশেষ প্রশিক্ষিত ব্যক্তিকেও হনুমানের পোশাক পড়িয়ে, বিস্তর ফলমূলের বস্তা ধরিয়ে মধ্যদিল্লির বাঁদর অধ্যুষিত অঞ্চলে বহাল করা হবে বলে জানিয়েছেন এনডিএমসি-র ভাইস চেয়ারম্যান সতীশ উপাধ্যায়। “দিল্লির যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল, জি-২০ উপলক্ষে রাজধানী দিল্লিতে আসা বিদেশি অতিথি-অভ্যাগতদের হোটেল, চলাচলের রুট, সেমিনার হল, দর্শনীয় স্থান, মন্ত্রণাল প্রভৃতি জায়গায় বসানো হবে এই ‘হনু-ফ্লেক্স’; বহাল করা হবে হনুমানের বেশধারী প্রশিক্ষিত ব্যক্তিদের”-জানিয়েছেন উপাধ্যায়। এই ব্যক্তিরা শুধু হনুমানের ভেক ধরে বাঁদরদের ভয়ই দেখাবেন না, হনুমানের মতো বিকট তর্জন গর্জন করে বাঁদরদের জি-২০ সম্মেলনের মঞ্চ থেকে দূরে রাখবে।

দিল্লির বাঁদরদের কবজা করতে এর আগে অন্য একটি কৌশলের কথাও ভেবেছিল সরকার। তা হল বনবিভাগ থেকে প্রশিক্ষিত শিকারীদের এনে ঘুমপাড়ানি গুলি ছুঁড়ে বাঁদর-দের কবজা করে দিল্লির উপকণ্ঠে বিভিন্ন ফরেস্ট বা স্যাংচুয়ারিতে স্থানান্তরিত করা৷ কিন্তু দিল্লির বিভিন্ন সক্রিয় পশু অধিকার স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এবং ‘পেটা’র চোখ রাঙানি তথা রামভক্ত ‘বজরংবলি’র গুণগ্রাহী, ধর্মপ্রাণ দিল্লিবাসীর আবেগের কথা ভেবেই সেই পন্থা থেকে সরে আসে সরকার। আপাতত জি-২০ সম্মেলনকে শান্তিপূর্ণ এবং সুরক্ষিত করার উদ্দেশ্যে বাঁদরদের দূরে রাখতে হনু-ফ্লেক্স এবং হনুমানের ভূমিকায় প্রশিক্ষিত ব্যক্তিদের বহাল করার সিদ্ধান্তেই ভরসা রাখছে কেন্দ্রীয় সরকার।

যদিও রাজনৈতিক মহলের একাংশ মনে করছেন, এই বাঁদরদের কী আদৌ এই উপায়ে জব্দ করা সম্ভব হবে? আপাতত এই আশঙ্কা মাথায় রেখেই জি-২০ সম্মেলনের মঞ্চ থেকে বাঁদর খ্যাঁদাতে উঠে পড়ে লেগেছেন সরকারি কর্মকর্তারা।

Solanki Paul
Solanki Paulhttps://uttarbangasambad.com/
Solanki Paul is working as Sub Editor based in Darjeeling district of West bengal since 2020. Presently she is attached with Uttarbanga Sambad. She is involved in Copy Editing, Uploading in website and various social media platforms.
RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments