মহম্মদ আশরাফুল হক, চাকুলিয়া: প্রায় দশ মাস আগের কথা। চাকুলিয়ার (Chakulia) ভেবড়া এবং সাহাপুরের নয়াহাটের বাসিন্দাদের যদি কেউ শান্তিপূর্ণ ভোটের কথা বলতেন, তাঁরা হয়তো বিশ্বাস করতেন না। কারণ গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে রাজনৈতিক সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছিলেন তিনজন। সেই আতঙ্ক এতদিন বাসিন্দাদের তাড়া করত। কিন্তু এই লোকসভা নির্বাচনে (Lok Sabha Election 2024) ছবিটা পালটে গেল। কেন্দ্রীয় বাহিনীর সৌজন্যে নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পেরে খুশি এলাকাবাসী। তবে বিদ্যানন্দপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধানের স্বামী তথা তৃণমূলের যুব নেতা মহম্মদ শাহেনশাকে মনে করে শুক্রবার কাঁদলেন অনেকেই।
২০২৩ সালের ৮ জুলাই রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন ছিল। রাজনৈতিক সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল চাকুলিয়ার বেশ কয়েকটি এলাকা। সংঘর্ষে প্রাণহানি হয়েছিল তিনজনের। তারপর থেকে ভোট মানেই আতঙ্ক বাসিন্দাদের কাছে। স্পর্শকাতর বুথ হিসেবে চিহ্নিত বুথগুলিতে তাই এবার কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়।
অযথা ভিড় করতে দেওয়া হয়নি। এমনকি, অনুমতি থাকা সত্ত্বেও সাংবাদিকদের এলাকার অনেক বুথের ছবি তুলতে দেওয়া হয়নি বলেও অভিযোগ। প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ উপেক্ষা করে এলাকার ভোটাররা লাইনে দাঁড়ান। নয়াহাট বুথের ভোটার জাফর ইকবাল বলেন, ‘গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে তিন মৃতের মধ্যে দুজন আমাদের গ্রাম জাগিরবস্তির বাসিন্দা ছিলেন। ওই ঘটনার পর অনেকেই আতঙ্কে রাতে ঘুমাতে পারতেন না। এবারও রাজনৈতিক নেতারা আশ্বাস দিলেও ভয় কাটেনি। কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের কথায় বুথমুখো হন অনেকে। কিন্তু এদিন সবটা শান্তিভাবে হওয়ায় আমরা সবাই খুব খুশি।’ স্থানীয় রতন দাস, আনসার আলমরাও একই কথা বললেন।
গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে রাজনৈতিক সংঘর্ষে মারা যান বিদ্যানন্দপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধানের স্বামী মহম্মদ শাহেনশা। তৃণমূলের ওই যুব নেতা ১৯২ নম্বর ভেবড়া বুথের ভোটার ছিলেন। নম্র আচরণ ও ভালো ব্যবহারের জন্য তিনি বেশ জনপ্রিয় ছিলেন। তাই তাঁর অকালমৃত্যু মেনে নিতে পারেননি এলাকাবাসী। এদিন তাঁকে মনে করে অনেকেরই চোখে জল দেখা গিয়েছিল। তাঁদের মধ্যে একজন সোহনলাল সিংহ। তিনি বলেন, ‘শাহেনশার কাছে হিন্দু-মুসলিম ভেদাভেদ ছিল না। এলাকার কারও বিয়ে থেকে মৃত্যু, যে কোনও কাজে তাঁকে পাশে পাওয়া যেত। পঞ্চায়েত ভোটের দিন আমরা সেই প্রিয় নেতাকে হারিয়ে ফেলি।’