ময়নাগুড়ি: আবহাওয়ার খামখেয়ালিপানায় মাথায় হাত পড়েছে ক্ষুদ্র চা চাষিদের। প্রায় দুই মাসের বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে চা পাতা উত্তোলনের কাজ। বৃষ্টির দেখা নেই। ফার্স্ট ফ্লাশ চা উৎপাদনে চরম সমস্যায় পড়েছেন জেলার ক্ষুদ্র চা চাষিরা। বড় বাগানগুলোতে জলসেচের তেমন সমস্যা না হলেও ক্ষুদ্র চা বাগানগুলোতে জলসেচ করতে পারছে না। কারণ জলসেচ করতে হলে অনেক টাকা গুনতে হবে চাষিদের। জলের অভাবে শুকিয়ে গিয়েছে চা গাছ। এই অবস্থায় ছোট চা বাগানগুলো পাতা তোলা বন্ধ করে দিয়েছে।
জলপাইগুড়ি জেলার বিভিন্ন জায়গাজুড়ে রয়েছে ছোট-বড় চা বাগান। উৎপাদনের ষাট শতাংশ চা আসে ওই সমস্ত ছোট বাগান থেকে। কিন্তু বিগত কয়েক মাস ধরে অনাবৃষ্টিতে রীতিমতো মাথায় হাত পড়েছে চা চাষিদের। গত বছরেও জুন মাসে ৩০ শতাংশ ঘাটতিতে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছিল ক্ষুদ্র চা চাষিদের। এই অবস্থায় এখনও বৃষ্টি না হওয়ায় ফার্স্ট ফ্লাশ চা উৎপাদনে লোকসানের মুখ দেখতে হবে। ময়নাগুড়ির এক ক্ষুদ্র চা চাষি রতন রায় বলেন, ‘এই মুহূর্তে জলসেচ করতে বাড়তি খরচ হচ্ছে।’
ময়নাগুড়ি ব্লকের পানবাড়ি, রামশাই, আমগুড়ি, সাপ্টিবাড়ি, ব্যাংকান্দি, ভোটপট্টি, মাধবডাঙ্গার মতো বিভিন্ন জায়গাজুড়ে প্রচুর ছোট বাগান রয়েছে। অধিকাংশ ছোট বাগানে জলসেচে বাড়তি খরচ গুনতে হচ্ছে চাষিদের। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে আরও ক্ষতির মুখে পড়তে হবে ক্ষুদ্র চা চাষিদের। ময়নাগুড়ির আরেক চা চাষি তপন মণ্ডল বলেন, ‘অতিরিক্ত জলসেচে খরচের বাজেট বাড়ছে। এরকম পরিস্থিতি থাকলে আরও খরচ বাড়বে। সে সেক্ষত্রে ঋণের বোঝা বেড়েই চলছে।’
জলপাইগুড়ি জেলা ক্ষুদ্র চা চাষি সমিতির সম্পাদক বিজয়গোপাল চক্রবর্তী বলেন, ‘জেলাজুড়ে ক্ষুদ্র চা চাষিদের সত্যি কঠিন অবস্থার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। যদিও এই কঠিন অবস্থার মধ্য দিয়েও ক্ষুদ্র চা চাষিদের জন্য ভালো খবর রয়েছে। গত ২০২২ সালে উত্তরবঙ্গে উৎপাদিত চায়ের মধ্যে ক্ষুদ্র চা বাগানের এবদান ছিল ৬০ শতাংশ। ২০২৩ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৪ শতাংশ। যা গতবারের তুলনায় ৪ শতাংশ বেশি। ২০২২ সালে কাঁচা পাতার দাম ছিল ১৮ টাকা। ২০২৩ সালে দাম গড়ে ১৪ টাকায় নেমে এসেছে’
ডুয়ার্স ব্রাঞ্চ টি অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান জীবন পান্ডের কথায়, ‘ফলনে ঘাটতির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। ফার্স্ট ফ্লাশে চরম ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। আবহাওয়ার পরিবর্তন না হলে সমস্যা বাড়বে।’