মাদারিহাট: চারিদিকে প্রবল তাপপ্রবাহ। নিয়মিত তাপমাত্রা নতুন নতুন রেকর্ড গড়ছে। গরমে শরীর সুস্থ রাখতে কী খাবেন, কী খাবেন না তা নিয়েও চলছে বিস্তর আলোচনা। গোটা রাজ্যের পাশাপাশি গরমের আঁচ এসে পড়েছে দক্ষিণ খয়েরবাড়ি ব্যাঘ্র পুনর্বাসন কেন্দ্রেও। এখানে বর্তমানে ২২টি চিতাবাঘ রয়েছে। গরমে তারাও সামান্য কাহিল হয়ে পড়ছে।
শরীর সুস্থ রাখতে এই চিতাবাঘদের খাবারের দিকে এবার বিশেষ নজর দেওয়া হল। এতদিন তাদের দেওয়া হত গোরুর মাংস। এবার বদল আনা হয়েছে মেনুতে। চিতাবাঘদের দেওয়া হচ্ছে মুরগির মাংস। এমনকি তাদের যাতে ডায়ারিয়া না হয়, সেইজন্য দেওয়া হচ্ছে ওআরএস।
হঠাৎ মেনুতে বদল? জলদাপাড়ার প্রাণী চিকিৎসক উৎপল শর্মা জানালেন, গোরুর মাংস অত্যন্ত গরম। সেইজন্য চিতাবাঘদের খাবার মেনু থেকে গোরুর মাংস আপাতত বাদ দেওয়া হয়েছে। পরিবর্তে দেওয়া হচ্ছে মাথাপিছু তিন কেজি করে মুরগির মাংস। জলের সঙ্গে দিনে দু’বার মিশিয়ে দেওয়া হচ্ছে ওআরএস। বৃহস্পতিবার অবশ্য নিয়ম মেনে চিতাবাঘদের উপোসে রাখা হয়।
এদিকে মুরগির মাংস পেয়ে খুশি মিঠুন, মনারা। মিঠুন এখানকার সবচেয়ে বয়স্ক চিতাবাঘ। মনা কনিষ্ঠতম। এদের রক্ষক হিসেবে রয়েছেন অভিজ্ঞ বিট অফিসার পার্থসারথি সিনহা। পার্থ এবং উৎপলের যত্নে এখানকার চিতাবাঘগুলি বার্ধক্যেও তরতাজা রয়েছে। এর আগে এখানে রাজা নামের একটি চিতাবাঘ ২৬ বছর বয়সে মারা যায়। একটি পূর্ণবয়স্ক চিতাবাঘের ক্ষেত্রে এই বয়সে মৃত্যু মানে একজন মানুষের শতবর্ষ পার। মিঠুনের বয়স বার্ধক্যের কোটায়, তবুও চিতাবাঘটি এখনও তরতাজা।
দক্ষিণ খয়েরবাড়ির এই জঙ্গলের পরিবেশ বন্যপ্রাণীদের বসবাসের অনুকূল। গোটা এনক্লোজারটি ঘিরে রয়েছে শাল, সেগুন, মেহগনি, শিরীষ ইত্যাদি গাছ। এই এনক্লোজারের কোল ঘেঁষে বয়ে গিয়েছে বুড়িতোর্ষা নদী। এই উপাদানগুলি তীব্র গরমেও খানিকটা রক্ষাকবচের কাজ করছে বলে জানালেন পার্থ। গরমের আঁচ থেকে কিছুটা হলেও রক্ষা পাচ্ছে এখানকার চিতাবাঘগুলি।
এদিকে এই নর্থ খয়েরবাড়ি ব্যাঘ্র পুনর্বাসন কেন্দ্রটিকে মিনি চিড়িয়াখানা হিসেবে গড়ে তোলার কাজ অনেকটা এগিয়েছে বলে জানালেন কেন্দ্রীয় বনমন্ত্রকের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যসচিব সৌরভ চৌধুরী। আগামী জুন মাসের মাঝামাঝি একটি মাস্টার প্ল্যান জমা করা হবে রাজ্যের কাছে। রাজ্য অনুমোদন দিলে তারপর তা কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে যাবে।