প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত, নয়াদিল্লি: শুনতে আশ্চর্য লাগলেও এমনটাই হতে চলেছে ভূপেশ বাঘেলের রাজ্য ছত্তিশগড়ে। নীচে সুদৃশ্য রাস্তা, মাথার উপরে কপিকুলের অবাধ বিচরণ। নজিরবিহীন এই পরিকল্পনা স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর মস্তিষ্ক প্রসূত বলে জানা গিয়েছে সরকারি সূত্রে, শুক্রবার ৭ জুলাই যার আনুষ্ঠানিক দ্বারোদঘাটন করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজে।
কেন্দ্রীয় সূত্রে দাবি, শুক্রবার ছত্তিশগড় যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী মোদি৷ সেখানে কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ মন্ত্রকের অধীন ৬ লেন বিশিষ্ট ৩ কিমি বিস্তৃত রায়পুর-বিশাখাপত্তনম ঝাঁ চকচকে গ্রিনফিল্ড করিডর অধীন ৩-টি জাতীয় সড়ক প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনা করবেন মোদি৷ এই করিডর নির্মাণ হলে দক্ষিণ ভারতের সঙ্গে মধ্য ও পূর্ব ভারতের আরও একটি উল্লেখ্যনীয় যোগাযোগ ব্যবস্থা সাধিত হবে। কিন্তু সমস্যা দেখা দিয়েছে অন্যত্র।
সামগ্রিক পরিকল্পনাটি ছত্তিশগড়ের বিখ্যাত উদান্তি ওয়াইল্ডলাইফ স্যাংচুয়ারি এবং টাইগার রিজার্ভ ফরেস্টের মধ্যে পড়েছে। অর্থাৎ ঘন জঙ্গল এবং বন্যপ্রাণী অধ্যুষিত এই অঞ্চলের মধ্যে দিয়ে সড়কপথ নির্মাণ হলে, তা সাধারণ মানুষের পক্ষে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক এবং লাভদায়ক সাব্যস্ত হলেও, বন্যপ্রাণীদের জন্য যে তা রীতিমতো সমস্যার কারণ হয়ে উঠবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
সরকারি সূত্রের দাবি, এই মুশকিল আসানে এগিয়ে আসেন খোদ প্রধানমন্ত্রী। তিনি নিজেও আদ্যন্ত পশুপ্রেমী, চান না সড়কপথ নির্মাণের ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়ুক অঞ্চলের বন্যপ্রাণীরা। সেই জন্য আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে জাতীয় সড়কপথের পাশাপাশি তৈরি হচ্ছে ২৭ টি অ্যানিমাল প্যাসেজ বা বন্যপ্রাণীদের জন্য পৃথক যাতায়াত ব্যবস্থা। অর্থাৎ এই প্যাসেজের মাধ্যমে খুব সহজে ও নিরাপদে বন্যপ্রাণীরা রাস্তা এপার ওপার করতে পারবে এবং দুর্ঘটনার হাত থেকেও রক্ষা পাবে।
একইসাথে তৈরি করা হচ্ছে ১৭ টি মাংকি ক্যানোপি, অর্থাৎ বাঁদরদের যাতায়াতের জন্য সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা। বনমন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে ছত্তিশগড়ের এই অংশে বাঁদর অধ্যুষিত৷ তাঁদের পারাপারের জন্য এই মজবুত ক্যানোপিগুলিকে তৈরি করা হবে রাস্তার ওপরে, একধার থেকে অন্য ধারে, শূন্যে ভাসমান অবস্থায়। অর্থাৎ অঞ্চলের কপিকুল খুব সহজেই রাস্তা পারাপার করতে পারবে, রাস্তায় নামবার প্রয়োজন হবে না। নি:সন্দেহে অভিনব এই উদ্যোগ, যা নিয়ে ইতিমধ্যেই জল্পনা শুরু হয়েছে। এর আগে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে দিল্লি-দেহরাদুন সুদীর্ঘ ইকোনমিক করিডরের শিলান্যাস করেন মোদি, যা এশিয়ার দীর্ঘতম ওয়াইল্ড লাইফ করিডর, সেখানেও রয়েছে এমন ব্যবস্থাপনার প্রস্তাব।
ছত্তিশগড়ের এই সড়ক প্রকল্প নিয়েও অবশ্য বিরোধীরা কটাক্ষ করতে ছাড়েননি। ছত্তিশগড় কংগ্রেসের তরফে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী বন্যপ্রাণ রক্ষা করতে চান, খুব ভালো কথা। এলিভেটেড বা উড়ুক্কু ক্যানোপি গড়ে বাঁদরদের সেফ প্যাসেজ গড়ে দেওয়া হবে, কিন্তু করিডর নির্মাণ শুরু হলে অঞ্চলের বহু আদিবাসী গ্রাম ‘নিশ্চিহ্ন’ হবে। সেই সব গরীব অসহায় মানুষদের যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ এবং পুনর্বাসন নিয়ে কী পরিকল্পনা সরকারপক্ষের? বলাবাহুল্য এই বিষয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও মন্তব্য করেনি সড়ক পরিবহণ মন্ত্রণালয়।