প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়, বর্ধমান: ঢাকঢোল পিটিয়ে বামফ্রন্ট ঐক্য জিন্দাবাদ বলা হলেও বাস্তবটা বোধহয় তা নয়। ঐক্যে এখনও যে ফাটল রয়েছে, পূর্ব বর্ধমানের খণ্ডঘোষের শশঙ্গা গ্রাম পঞ্চায়েতের নিশ্চিতপুর গ্রাম তার বড় উদাহরণ। পঞ্চায়েত ভোটে এই গ্রাম পঞ্চায়েতের ৯ নম্বর সংসদের ১২৭ নম্বর বুথে সিপিএম প্রার্থীর বিরুদ্ধে মুখোমুখি লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়েছেন ফরওয়ার্ড ব্লকের প্রার্থী। এটাকে হাতিয়ার করেই এখন ফায়দা তুলতে মরিয়া তৃণমূল শিবির।
পঞ্চায়েত ভোট ঘোষণার পর শাসকদলকে পিছনে ফেলে বামেরা প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করে। ওই সময় সিপিএম নেতৃত্ব বড় মুখ করে ঘোষণা করেন, বাম ঐক্য ষোলো আনা হয়েছে। কিন্ত সেটা বোধহয় কথার কথা ছিল। তাই বাম ঐক্যে ফাটলের ছবিটা পূর্ব বর্ধমান জেলাতেই ধরা পড়ে যায়। জেলার শশঙ্গা গ্রাম পঞ্চায়েতের ৯ নম্বর সংসদের ১২৭ নম্বর বুথে ফরওয়ার্ড ব্লকের প্রার্থী হয়ে প্রতিদ্বন্দিতা করছেন শেখ জামালউদ্দিন ওরফে বকুল। এই ফরওয়ার্ড ব্লকের প্রার্থীর বিপরীতে সিপিএমের প্রার্থী হয়ে প্রতিদ্বন্দিতায় অবতীর্ণ হয়েছেন শেখ ইমাম হোসেন ওরফে মনা। আর এই দুই বাম প্রার্থীর বিরুদ্ধে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী হয়ে প্রতিদ্বন্দিতা করছেন শেখ নাজির হোসেন। বামেদের দুই প্রার্থী লড়াইয়ে সামিল হওয়ায় আখেরে তৃণমূলের প্রার্থীই লাভবান হবে বলে মনে করছেন খণ্ডঘোষের শশঙ্গার ভোটাররা।
কিন্তু ঐক্য অনৈক্যের রূপ নিল কেন? ফরওয়ার্ড ব্লকের ব্লক সভাপতি তথা প্রার্থী শেখ জামালউদ্দিন এই প্রসঙ্গে বলেন, “কিছুদিন আগে সিপিএমের রাজ্য নেতা অমল হালদার কথা দিয়ে গিয়েছিলেন শশঙ্গা গ্রাম পঞ্চায়েতের ৯ নম্বর সংসদের ১২৭ নম্বর আসনে ফরওয়ার্ড ব্লকেরই প্রার্থী থাকবে। কিন্তু অদ্ভুত ভাবে সিপিএম কথা রাখেনি। এমনটা হওয়ার জন্য জামালউদ্দিন সিপিএমের খণ্ডঘোষ ১ নম্বর এরিয়া কমিটির নেতা বিশ্বরূপ হাজরার দিকেই অভিযোগের আঙুল তুলেছেন। তাঁর আরও অভিযোগ, সিপিএমের প্রার্থী আসলে তৃণমূল কংগ্রেসেরই লোক। ১২৭ নম্বর আসনে ফরওয়ার্ড ব্লকের শক্তি চিরকাল বেশি। তাই তলায় তলায় তাঁকে হারিয়ে দিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থীর জয় নিশ্চিত করার খেলা চলছে।“
সিপিএমের জেলা সম্পাদক সৈয়দ হোসেন যদিও বৃহস্পতিবারও দাবি করেন, “পূর্ব বর্ধমান জেলায় বাম ঐক্য অটুট আছে। শশঙ্গায় কী ঘটেছে তা খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে বলে সৈয়দ হোসেন মন্তব্য করেন।“ আর সিপিএম প্রার্থী বিশ্বরূপ হাজরার দাবি, “বাম ঐক্য ভাঙেনি। তাঁরা মনোনয়ন পেশ করেছিলেন। কিন্তু তুলে নেওয়ার সময় পেরিয়ে গিয়েছিল।“ জামালউদ্দিন এই প্রসঙ্গে জানান, “ওরা প্রচার করবে না বলে জানিয়েছিল। কিন্তু এখন পোস্টার মেরেছে। দেওয়াল লিখন করেছে। এটা বাম ঐক্যের পরিপন্থী।“
খণ্ডঘোষ ব্লক তৃণমূলের সভাপতি অপার্থীব ইসলাম বলেন, “ওদের ঐক্য কোন দিনও ছিল না। বাম আমলেও ওদের শরিকি লড়াই গোটা রাজ্যবাসী দেখেছে। ওরা মুখে বাম ঐক্য জিন্দাবাদ বলে যা বলে সেটি ফাঁকা আওয়াজ ছাড়া আর কিছু নয়। ওদের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব আগেও যেমন ছিল, এখনও তেমনটাই আছে।“