বিশ্বজিৎ সাহা, মাথাভাঙ্গা: শহরের ছবিরুন্নেসা নিম্ন বুনিয়াদি বিদ্যালয়ের সামনে শীতলকুচি রোডে রাস্তার ওপর পড়ে ছিল ব্যবহার করা স্যানিটারি ন্যাপকিন। মায়ের হাত ধরে ওই রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র সোহমের নজরে আসে। ‘ওটা কী?’ মাকে জিজ্ঞেস করতেই ছেলের প্রশ্নে অপ্রস্তুত মায়ের উত্তর, ‘ওটা নোংরা জিনিস দেখতে নেই’।
সোহমের মা কাকলি রায় ছেলেকে দেখতে বারণ করলেও পুরসভার সঠিক পরিকল্পনা, উদ্যোগ এবং নাগরিক সচেতনতার অভাবে মাথাভাঙ্গার রাস্তা কিংবা নদীর ধারে এমনকি নদীতেও ডায়পার, ন্যাপকিন প্রভৃতি ছুড়ে ফেলতে দেখা যায়। এই ঘটনায় উদ্বিগ্ন পরিবেশপ্রেমী এবং সচেতন মানুষজন। মাথাভাঙ্গা পুরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার কাকলি ঘোষ বলেন, ‘আমার ওয়ার্ডে দু’-একটি বাড়ি থেকে রাস্তায় ডায়পার ও ন্যাপকিন ফেলার অভিযোগ এসেছিল। আমি সংশ্লিষ্ট বাড়িগুলিতে গিয়ে তাদের সতর্ক করে এসেছি।’
মাথাভাঙ্গা পুরসভা নির্মল পুরসভা হিসেবে ঘোষিত হলেও নদী সংলগ্ন এলাকাগুলিতে উন্মুক্ত এলাকায় শৌচকর্ম এখনও বন্ধ করতে পারেনি পুর কর্তৃপক্ষ। সেইসঙ্গে যত্রতত্র স্যানিটারি ন্যাপকিন ও ডায়পার ফেলার এই অভ্যাস পরিবেশ এবং জনস্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর বলে মত উদ্বিগ্ন চিকিৎসকদের।
মাথাভাঙ্গা মহকুমা হাসপাতালের ফিজিশিয়ান ডাঃ শান্ত বর্মন জানান, ‘যেখানে-সেখানে স্যানিটারি ন্যাপকিন ও ডায়পার ফেলা উন্মুক্ত শৌচকর্মে মতোই বিপজ্জনক। এর ফলে প্রচুর পরিমাণে বায়ু দূষণের সম্ভাবনা রয়েছে।’ তিনি নাগরিকদের সচেতন করে বলেছেন, এসব বর্জ্যে প্রচুর ক্ষতিকারক ব্যাকটিরিয়া ও ভাইরাস থাকে। সেসব বাতাসে বা জলের সঙ্গে মিশে পেট খারাপ থেকে শুরু করে নিউমোনিয়া, টাইফয়েড, কৃমি, মেনিনজাইটিস এমনকি টিবির মতো রোগও হতে পারে।
হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রোগীদের ব্যবহার্য ডায়পার ও ন্যাপকিন প্রতিনিয়ত গ্রিনজেন নামক একটি সংস্থায় যায়। তবে শহরবাসীর সচেতনতার অভাবে যত্রতত্র ডায়পার ও ন্যাপকিন পড়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে। পুরসভা এলাকার বাসিন্দাদের এসব বিষয় নিয়ে সচেতন করার দায়িত্ব বর্তায় নির্মল সাথীদের উপর। এক্ষেত্রে তাঁরা দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছে কি না, তা নিয়ে ইতিমধ্যে প্রশ্ন উঠেছে।
মাথাভাঙ্গা পুরসভার স্যানিটারি ইনস্পেকটর পঙ্কজ রায়ের আশ্বাস, ‘১২ ওয়ার্ডবিশিষ্ট মাথাভাঙ্গায় নির্মল সাথীর ৯ জন সদস্য রয়েছেন। তাঁদের নিয়ে বৈঠক করে জনগণকে কীভাবে সচেতন করা যায় শীঘ্রই তার একটি রূপরেখা তৈরি হবে।’