রায়গঞ্জ: পূর্ব মেদিনীপুরে ভূপতিনগরে এনআইএর অভিযান নিয়ে বিজেপিকে বিঁধলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার ভোট প্রচারে এসে তিনি বলেন, ‘মধ্যরাতে প্রশাসনকে না জানিয়ে কারও বাড়িতে গেলে যা হওয়ার তা হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী পুলিশ প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে তল্লাশিতে যেতে হয় কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে।’ তৃণমূল নেত্রীর অভিযোগ, ওই অভিযানে মহিলাদেরও সম্ভ্রম নষ্ট হয়েছে, যা অনভিপ্রেত। ভুপতিনগর ঘটনায় রিপোর্ট তলব করেছে নির্বাচন কমিশন।
মুখ্যমন্ত্রীর এই প্রতিক্রিয়ার পালটা প্রতিক্রিয়া দিয়েছে রাজ্যের বিরোধীরা। বিজেপি সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য, সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী ও কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী প্রত্যেকেই বলেছেন, ‘ইডির পর এনআইএর ওপর হামলা ফের প্রমাণ করল, রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা বলে কিছু নেই। এনআইএর তরফে বলা হয়েছে। তাঁদের গাড়ি ভাঙচুর হয়েছে। তাঁদের এক আধিকারিক আহত হয়েছেন।’
বিজেপি সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘মুখ্যমন্ত্রীর ক্রমাগত উসকানিতে আক্রান্ত হতে হচ্ছে কেন্দ্রীয় এজেন্সির আধিকারিকদের। তবে এনআইএ এই ঘটনা নিয়ে অভিযোগ দায়ের করেছে।’ পুলিশ জানিয়েছে, গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। তবে কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। আর এখানে বিরোধীদের অভিযোগ, তৃণমূল গোটা রাজ্যে সন্দেশখালি মডেল চালু করেছে।তবে প্রবল বাধার মধ্যে পড়েও তৃণমূলের দুই নেতা বলাইচরণ মাইতি ও মনোব্রত জানাকে গ্রেপ্তার করেছে। এই গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে ভূপতিনগর এলাকার তৃণমূল কর্মীরা টায়ার জ্বালিয়ে এনআইএর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়।
এর আগে সন্দেশখালিতে তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহানের বাড়িতে তল্লাশি চালাতে গিয়ে গণরোষের মুখে পড়তে হয়েছিল ইডিকে। এবার একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটল ভূপতিনগর এলাকায়।কিছুদিন আগে ভূপতিনগরে বিস্ফোরণকাণ্ডে দুজনের মৃত্যু হয়েছিল। আদালতের নির্দেশে সেই বিস্ফোরণ কাণ্ডের তদন্তভার বর্তায় এনআইএর ওপর।শুক্রবার মধ্যরাতে এনআইয়ের একটি দল ভূপতিনগর নিচাবাড়ি এলাকায় পৌঁছে স্থানীয় দুই তৃণমূল নেতাকে গ্রেপ্তার করে গাড়িতে তোলে। এরপর হঠাত করেই পঞ্চাশ থেকে ষাটজনের একটি দল চড়াও হয় এনআইএর গাড়ির ওপর। সামনের সারিতে ছিলেন মহিলারা। বাঁশের আঘাতে এবং ইট ছোড়ার ফলে এনআইয়ের গাড়ির কাঁচ ভেঙ্গে যায়। সামান্য জখম হন এক এনআইএ আধিকারিক।এরপরেই বিশাল পুলিশবাহিনী এলাকায় গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
আজ সকালে অভিযুক্তদের খোঁজে এনআইএর একটি দল গেলে ফের প্রচুর মহিলা প্রতিরোধ গড়ে তোলে। লাঠি, বাঁশ হাতে তাঁরা এনআইএর দলকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে। যদিও তাঁরা অভিযুক্ত দুই তৃণমূল নেতাকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়।
এনআইএর এই অতি সক্রিয়তা নিয়ে সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ রায়গঞ্জে তিনি বলেন, ‘এর আগে সন্দেশখালিতেও রাতের অন্ধকারে অভিযান চালিয়েছিল ইডি। এবার ফের রাতের অন্ধকারে ভূপতিনগরে হানা দিয়েছে। যাওয়ার আগে স্থানীয় পুলিশকেও খবর দেওয়া হয় না। আসলে রাতের অন্ধকারে গ্রামের মানুষ অপরিচিত লোকজন দেখে যা করে, তাই করেছে। আসলে বিজেপি ভোটের আগে বিরোধী দলগুলিকে বিপাকে ফেলতে ষড়যন্ত্র করছে। তৃণমূল দেশজুড়ে এর বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলবে।’ এই ঘটনায় রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার ক্রমাগত অবনতিতে ডিজি থেকে এডিজি (আইন শৃঙ্খলা), এসপি ও ভূপতিনগর থানার ওসিকে সরিয়ে দেওয়ার দাবি তোলা হয়েছে।