শিলিগুড়ি: গত বছরের ২৬ মে উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজে এমডি’র পরীক্ষা চলাকালীন এক চিকিৎসক নেতার পরীক্ষাকেন্দ্রের ভিতরে মোবাইল হাতে ঘোরাঘুরি করার ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল। বিষয়টি নিয়ে নালিশ গিয়েছিল ন্যাশনাল মেডিকেল কমিশনেও। বর্ধমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের রেসিডেন্সিয়াল মেডিকেল অফিসার (আরএমও) হিসাবে সেই সময় কর্মরত ওই চিকিৎসক নেতা বর্তমানে কলকাতায় এসএসকেএমে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেনি (পিজিটি) হিসাবে কর্মরত। তিনি আবার রাজ্য মেডিকেল কাউন্সিলের সদস্য। এবার রাজ্য মেডিকেল কাউন্সিলের ছাড়পত্র নিয়েই তিনি ডাক্তারি পরীক্ষায় নজরদারি চালাবেন, যা নিয়ে রীতিমতো ক্ষোভে ফুঁসছে চিকিৎসক মহল। রাজ্য মেডিকেল কাউন্সিলের এই সিদ্ধান্তকে ন্যাশনাল মেডিকেল কমিশন মান্যতা দেবে কি না সেই প্রশ্নও চিকিৎসক মহলে উঠেছে।
রাজ্য মেডিকেল কাউন্সিলের সহ সভাপতি ডাঃ সুশান্ত রায় বলছেন, ‘আইনের বাইরে গিয়ে আমরা কিছু করিনি। ১৯১৪ সালের মেডিকেল অ্যাক্টের (সংশোধিত) ১৯ নম্বর ধারায় স্পষ্ট বলা রয়েছে যে, পরীক্ষাকেন্দ্রে রাজ্য মেডিকেল কাউন্সিল আচমকা পরিদর্শনে যেতে পারে। সেই আইন মেনেই বিভিন্ন মেডিকেল কলেজের জন্য তিন সদস্যের চিকিৎসক দল তৈরি করা হয়েছে।’ তাঁর অভিযোগ, ‘আইন না জেনেই কেউ কেউ অভিযোগ তুলছেন।’
রাজ্য মেডিকেল কাউন্সিল সম্প্রতি রাজ্যের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে ডাক্তারি পরীক্ষায় নজরদারির জন্য কাউন্সিলের তিনজন করে সদস্যকে রেখে দল গঠন করেছে। উত্তরবঙ্গ এবং মুর্শিদাবাদের মেডিকেল কলেজগুলিতে নজরদারির জন্য গঠিত দলে রয়েছেন উত্তরবঙ্গ মেডিকেলের মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডাঃ দীপাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়, এসএসকেএমের পিজিটি ডাঃ অভীক দে এবং আরজি কর মেডিকেল কলেজের সিনিয়ার রেসিডেন্টস (এসআর) ডাঃ সৌরভ পাল। দক্ষিণবঙ্গের বাকি সমস্ত মেডিকেল কলেজের জন্য পৃথক দল গঠন করা হয়েছে।
ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ডাঃ কৌশিক চাকির বক্তব্য, ‘পরীক্ষা নেওয়ার জন্য অন্তত একজন শিক্ষককে দায়িত্ব দেওয়া উচিত। আমরা সবক্ষেত্রে সেটাই দেখে এসেছি। কিন্তু এখন দেখছি ডাক্তারির পরীক্ষার সারপ্রাইজ ভিজিটে যাবে এসআর, পিজিটি। তাহলে আর শিক্ষকের কী প্রয়োজন থাকল?’ তাঁর সংযোজন, ‘একটা আইনকে দেখিয়ে রাজ্য মেডিকেল কাউন্সিল এই বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে, কিন্তু চিকিৎসকদের পরীক্ষা দেখার দায়িত্বটা শিক্ষক স্তরের কারও থাকা উচিত বলে মনে করি।’ সুশান্ত রায়ের বক্তব্য, ‘অভীক দে-কে নিয়েই সবার সমস্যা হচ্ছে বুঝতে পারছি। কিন্তু অভীক তো রাজ্য মেডিকেল কাউন্সিলের সদস্য।’
চিকিৎসক মহলের অনেকেই মনে করছেন, এই কমিটি গঠনের পর পরীক্ষার্থীদের মধ্যে প্রভাব পড়তে বাধ্য। তৃণমূলপন্থী চিকিৎসক ছাত্রছাত্রীরা কিছুটা বাড়তি সুবিধা পাবেন, অন্যদিকে বিরোধী মনোভাবাপন্নরা সমস্যায় পড়তে পারেন।