শুভ্রজিৎ বিশ্বাস, মেখলিগঞ্জ: গাজনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত রাজবংশী সম্প্রদায়ের ‘কাঠাম নৃত্য’ আজ প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে। তবে প্রায় ২০০ বছরের পুরোনো এই সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখার মরিয়া চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন কোচবিহারের (Cooch Behar) মেখলিগঞ্জ (Mekhliganj) শহর সংলগ্ন ৭০ মেখলিগঞ্জ গ্রামের বাসিন্দাদের একাংশ। প্রতিবছর পয়লা বৈশাখে ওই গ্রামে মেলার আয়োজন করা হয়। সেখানে আশপাশের এলাকার বাসিন্দারা বাঁশ ও কাগজের তৈরি কাঠাম নিয়ে উপস্থিত হন এবং কাঠাম নৃত্য প্রদর্শন করেন। প্রতি বছরই এলাকায় ভালো সাড়া পড়ে এই মেলাকে ঘিরে। বর্তমানে তারই প্রস্তুতি চলছে জোরকদমে।
এলাকার প্রবীণ বাসিন্দাদের মতে, ১৯৭৫ সালে ওই গ্রামে এই মেলার সূচনা হয়েছিল। একসময় ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায় মেলাটি অনুষ্ঠিত হত। সে সময় বাংলাদেশের নাগরিকরাও মেলায় যোগ দিতেন।
কিন্তু পবরবর্তীতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার হওয়ায় মেলাটি সরিয়ে ৭০ মেখলিগঞ্জ গ্রামে নিয়ে আসা হয়। মেলা শুরুর সপ্তাহখানেক আগে থেকেই এলাকার কচিকাঁচা এবং তরুণরা বাঁশ ও কাগজ দিয়ে নানা ধরনের কাঠাম তৈরি করে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ঘুরে অর্থ সংগ্রহ করেন। কাঠাম নৃত্যে অংশগ্রহণকারীরা কালী, মহাদেব, ডাকিনী, যোগিনী সহ নানা দেবদেবীর কাঠাম তৈরি করেন। দুর্গারূপী কাঠাম বানিয়ে অস্ত্রশস্ত্র সহ অসুর বধের দৃশ্য ফুটিয়ে তোলা হয়। বর্তমানে বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে কাঠাম নৃত্য প্রদর্শন করে চলছে সেই অর্থ সংগ্রহের কাজ।
স্থানীয় এক তরুণ সত্যজিৎ অধিকারী বলেন, ‘প্রতি বছরের পয়লা বৈশাখ আমরা ৭০ মেখলিগঞ্জ গ্রামে মেলার আয়োজন করি। তার কিছুদিন আগে থেকেই কাঠাম নৃত্য পরিবেশন করে চাঁদা তোলা হয়। এই কাঠাম প্রদর্শনের মূল উদ্দেশ্য হল মনোরঞ্জনের পাশাপাশি ধর্মীয় ও সামাজিক শিক্ষা।’ লোকশিল্পী রামমোহন বসাকের কথায়, ‘পুজো উপলক্ষ্যেই মূলত বিভিন্ন ধরনের কাঠাম তৈরি করা হয়। কাঠামমেলায় মূলত শিবপার্বতীর পুজো করা হয়। প্রায় ২০০ বছর ধরে এই প্রথা চলে আসছে। ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি বা শ্রদ্ধা থেকেই এর সূচনা। নবীন প্রজন্মকে যাতে এই ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি বাঁচিয়ে রাখায় আগ্রহী করে তোলা যায়, সেই চেষ্টা চালানো হচ্ছে।’