মোস্তাক মোরশেদ হোসেন,রাঙ্গালিবাজনা: শুক্রবার থেকে আলিপুরদুয়ার লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপি দ্বিতীয় দফার প্রচারাভিযান শুরু করবে। দ্বিতীয় দফায় মূলত চা বাগান চষে বেড়াবেন বিজেপি প্রার্থী মনোজ টিগ্গা ও নেতা-কর্মীরা। এদিকে, চা বলয় যে দলের বিদায়ি সাংসদ জন বারলার শক্তিশালী ঘাঁটি, সেকথা পদ্মফুল শিবিরে তো আরও অজানা নয়। কিন্তু চা বলয়ে মনোজের প্রচার অভিযানে শুরুর দিকে তাঁর সঙ্গে কিন্তু থাকছেন না বারলা। এমনকি শেষের দিকেও বারলার দেখা পাওয়া যাবে কি না, তা নিয়ে দলের কর্মীরাই সন্দিহান।
নাগরাকাটার চামুর্চি এলাকা থেকে শুক্রবার প্রচার শুরু করবেন মনোজ টিগ্গা। মনোজের সঙ্গে বারলা থাকছেন না ঠিকই, তবে থাকবেন নাগরাকাটার বিধায়ক পুনা ভেংরা। ভোটের মাত্র তিন সপ্তাহ আগেও বারলা প্রচারে না নামায় অস্বস্তিতে বিজেপি। তবে মনোজ আশা ছাড়ছেন না। কোন্দলের কথাও মানছেন না। কেবল বলছেন, ‘আশা করছি শীঘ্রই জনদাকে প্রচারে পাব।’
মাস কয়েক আগেই উত্তরবঙ্গ সংবাদ জানিয়ে দিয়েছিল আলিপুরদুয়ার লোকসভা আসনে এবার টিকিট পাওয়ার ক্ষেত্রে বারলা নয়, মনোজেরই পাল্লা ভারী। সেকথা সত্যি করেই বিজেপির ঘোষিত প্রার্থীতালিকায় মনোজের নাম ওঠে। বারলার নাম কাটা যায়। আর তারপরই টিকিট না পাওয়ায় রুদ্ররূপ ধারণ করেন বারলা। মনোজের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনতেও পিছপা হননি। মাদারিহাটে সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতেই মনোজের সামনে হম্বিতম্বি করতেও ছাড়েননি।
পরে অবশ্য দলের নানারকম প্রচেষ্টায় চিঁড়ে ভেজে। ঢোঁক গিলে মনোজের হয়ে প্রচারে নামার কথা ঘোষণা করেন বারলা। উত্তরবঙ্গে প্রচার করতে এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। তাঁর শিলিগুড়ি আসার আগে সুর নরম করেন আলিপুরদুয়ারের বিদায়ি সাংসদ।
তবে বারলার ওই আশ্বাস স্রেফ স্তোকবাক্য ছিল। মনে করছে বিজেপিরই একাংশ। আলিপুরদুয়ার লোকসভা কেন্দ্রে আলিপুরদুয়ার ও জলপাইগুড়ি জেলা মিলিয়ে ১১৬টি চা বাগান রয়েছে। চা বাগানের ভোটই আলিপুরদুয়ার আসনে ভোটের ফল নির্ণয় করে দেয়। চা শ্রমিকদের সিংহভাগই আদিবাসী সম্প্রদায়ের। বারলা আদিবাসী বিকাশ পরিষদের নেতা হিসেবেই পরিচিতি পান। সাংসদ ও মন্ত্রী থাকার সুবাদে জেলার প্রতিটি চা বাগানে তাঁর কমবেশি অনুগামী তৈরি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বারলা প্রচার থেকে দূরে থাকলে বিজেপিকে খেসারত দিতে হতে পারে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
মনোজ অবশ্য ঠান্ডা মাথায় এগোনোর চেষ্টা করছেন। তিনি জানান, ১১৬টি বাগানের প্রতিটিতেই কমপক্ষে একবার করে যেতে চান তিনি। কথা বলতে চান চা শ্রমিকদের সঙ্গে। যদিও আগামী ১০ দিন ধরে চা বলয়ে প্রচার করলেও প্রতিটি চা বাগানে পা দিতে হলে প্রতিদিন প্রায় ১২টি করে বাগান ‘কভার’ করতে হবে মনোজকে। সেটা কি আদৌ সম্ভব?
একদিকে রয়েছে শতাধিক চা বাগানে যাওয়ার চাপ। আরেকদিকে আলিপুরদুয়ারে এখনও পদ্মে রয়েই গিয়েছে বারলা কাঁটা। তিনিই বিজেপির চা শ্রমিক সংগঠন বিটিডব্লিউইউয়ের জন্ম দিয়েছেন বলে এর আগে দাবি করেছিলেন বারলা। এছাড়া বারলা টিকিট না পাওয়ায় সাংবাদিক বৈঠকে মনোজের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন বিটিডব্লিউইউয়ের একঝাঁক নেতা। সব ক্ষোভ কি আর চাপা পড়েছে? অবশ্য মনোজের দাবি, বিটিডব্লিউইউ নেতাদের ক্ষোভ প্রশমিত হয়েছে।
ভোট বড় বালাই। তাই, বারলা যা-ই বলুন না কেন, তাঁকে বগলদাবা করেই চা বলয়ে প্রচারে নামার আশা করেছিলেন মনোজ। আপাতত সে গুড়ে বালি। জেলায় বারলার দেখা নেই। ফোন করলেও উত্তর মিলছে না। মনোজ অবশ্য বলছেন, ‘জনদার স্ত্রী অসুস্থ। তাই সম্ভবত দু’-একদিন পর তিনি প্রচারে নামবেন।’
কিন্তু বারলা দিল্লিতে নাকি বানারহাটে, জানাতে পারেননি মনোজ। কারণ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত বারলার সঙ্গে তাঁর যোগাযোগই হয়নি। তাহলে আর মনকষাকষি মিটল কোথায়?