উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্কঃ উত্তরবঙ্গ সফরে শেষ করে কলকাতায় ফেরার পথে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার কবলে পড়েন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে মুখ্যমন্ত্রীর কপ্টার জরুরী অবতরন করে সেবকরোডের সেনা ছাউনিতে। মুখ্যমন্ত্রী এই দুর্ঘটনায় আহত হন। তাঁর শরীরের একাধিক জায়গায় আঘাত লাগে। এবার সেই কপ্টার দুর্ঘটনার তদন্ত করবে ডিরেক্টরেট জেনারেল অব সিভিল এভিয়েশন (ডিজিসিএ)। বেসরকারি ওই হেলিকপ্টারের ডিজিটাল ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার (ডিএফডিআর)-এ থাকা তথ্য খতিয়ে দেখার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে ডিজিসিএ সূত্রের খবর।
নির্বাচনী প্রচার সেরে গত ২৭ জুন জলপাইগুড়ির ক্রান্তির সভাস্থল থেকে হেলিকপ্টারে বাগডোগরা পৌঁছনোর কথা ছিল মুখ্যমন্ত্রীর। হেলিকপ্টার আকাশে ওড়ার কিছুক্ষনের মধ্যেই প্রবল ঝড় বৃষ্টি শুরু হয়। দুর্যোগের মুখে পড়ে মুম্বইয়ের একটি সংস্থা থেকে ভাড়া নেওয়া সেই হেলিকপ্টার। দৃশ্যমানতা প্রায় তলানিতে চলে যায়। ঝড়-বৃষ্টিতে বিপজ্জনক ভাবে দুলতে থাকে হেলিকপ্টারটি। বেগতিক দেখে হেলিকপ্টারের দুই পাইলট শালুগাড়ায় সেনাবাহিনীর হেলিপ্যাডে মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়ে জরুরি অবতরণ করেন। এই ঘটনায় গুরুতর জখম হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁকে বিশেষ বিমানে কলকাতা থেকে উড়িয়ে আনা হয়। তাঁর কোমরে বা পায়ে গুরুতর আঘাত লাগে। পরে তাঁর পায়ে অস্ত্রোপচারও হয় এসএসকেএমে।
জানা গিয়েছে, দেশের আকাশে বিমান, হেলিকপ্টার সংক্রান্ত কোনও দুর্ঘটনা বা বেনিয়ম ঘটলে সেই ঘটনার তদন্ত করে আকাশের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ডিজিসিএ। তারা জানিয়েছে, ঘটনার দিন ক’টার সময়ে হেলিকপ্টার উড়েছিল, তার ওয়েদার রেডারে কোনও আগাম সতর্কতা ছিল কি না, ক’টার সময়ে হেলিকপ্টার মুখ ঘুরিয়ে অন্যত্র চলে গিয়েছিল, সে সব তথ্যই জমা থাকে ডিএফডিআর-এ। ঘটনার কথা জানতে পেরে সমস্ত তথ্য চেয়ে পাঠায় ডিজিসিএ। প্রধানত দু’টি প্রশ্ন ওঠে। এক, ওই আধুনিক হেলিকপ্টারে ওয়েদার রেডার রয়েছে। কোনও গন্তব্যে রওনা হওয়ার আগে আকাশপথে (এনরুট) কোথাও দুর্যোগ রয়েছে কি না, তা আগেভাগে জেনে যাওয়ার কথা ছিল পাইলটদের। প্রশ্ন, সে দিন কি হেলিকপ্টারের ওয়েদার রেডার মারফত সেই দুর্যোগের কথা জানা যায়নি? যদি জানা গিয়ে থাকে, তা হলে তার পরেও কেন ঝুঁকি নিয়েছিলেন পাইলটেরা? দ্বিতীয় প্রশ্ন, মাঝপথে কোনও দুর্যোগে পড়লে সাধারণত যেখান থেকে রওনা হয়েছিল হেলিকপ্টার সেখানেই ফিরে আসার কথা। এ ক্ষেত্রে তা হয়নি।
ডিজিসিএ কর্তারা জানিয়েছেন, ওই ঘটনার পরে কপ্টারের দুই পাইলটের ভূয়সী প্রশংসা করে চিঠি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই চিঠিও এখন তদন্তের অঙ্গ। মুখ্যমন্ত্রী তাদের প্রশংসা করায় সেই পাইলটদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থাই নেয়নি বিমানসংস্থা।
উল্লেখ্য, দুর্ঘটনার পর মুখ্যমন্ত্রী সংবাদ মাধ্যমের কাছে জানিয়েছিলেন সেদিনের ভয়বহতার কথা। তিনি বলেছিলেন, আর ৩০ সেকেন্ড আকাশে থাকলেই কপ্টারটি ভেঙে পরত। তিনিও লাফ দিয়ে কপ্টার থেকে নেমেছিলেন। আর তাতেই তিনি আহত হন। অথচ দুর্ঘটনার দিন সেনার তরফে জানানো হয়েছিল, মমতার কপ্টার নির্বিঘ্নেই মাটি ছুঁয়েছিল।