গাজোলঃ মঙ্গলবার বিকেলে গাজোলের বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন মালদার জেলাশাসক নীতিন সিংহানিয়া। এদিন তিনি অতিরিক্ত জেলাশাসক বৈভব চৌধুরী, মালদা জেলা পরিষদের সভাধিপতি লিপিকা বর্মন ঘোষ সহ অন্যান্য পদাধিকারীকে নিয়ে পরিদর্শন করেন বন্যাকবলিত চাকনগর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা। দুর্গতদের সঙ্গে কথা বলার পাশাপাশি ত্রাণ বিলির কাজও তদারকি করেছেন জেলাশাসক।
গত কয়েকদিনের লাগাতার বৃষ্টিতে জলস্তর বেড়ে গিয়ে ভেঙে যায় গাজোল ব্লকের ওপর দিয়ে প্রবাহিত টাঙন নদীর বাঁধ। বাঁধ ভাঙে চাপনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের কদুবাড়ি, মাথা মোড়া এবং পিরালুতলা এলাকায়। নদীর জলে প্লাবিত হয় বৈর ডাঙি, ডোবা খোকসান, কদুবাড়ি, মাথামোড়া, পিরালুতলা সহ একের পর এক গ্রাম। জলের তলায় চলে গেছে সমস্ত কৃষি জমি। বন্যাদুর্গতদের উদ্ধার করে নিয়ে আসা হয় ত্রাণশিবিরে।
মঙ্গলবার চাকনগর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার প্লাবিত এলাকা পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের সব রকম সাহায্যের আশ্বাস দেন জেলাশাসক। পাশাপাশি ত্রাণ বিলির কাজও তদারক করেন তিনি। ভেঙে যাওয়া বাঁধের অংশ অবিলম্বে মেরামত করার জন্য সেচ দপ্তরের জেলার পদস্থ কর্তাদের নির্দেশ দেন। দুর্গত এলাকায় বিদ্যুৎ পরিষেবা স্বাভাবিক করা যায় তার জন্য বিদ্যুৎ দপ্তরকেও নির্দেশ দিয়েছেন জেলাশাসক নীতিন সিংহানিয়া। একই সাথে পানীয় জলের জন্য জনস্বাস্থ্য কারিগরি দপ্তর এবং সংশ্লিষ্ট এলাকায় স্বাস্থ্য শিবির করার জন্য স্বাস্থ্য দপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছেন।
এদিন জেলাশাসক বলেন, “টাঙন নদীর জলে প্লাবিত হয়ে যাওয়ায় প্রচুর ধান এবং সবজির জমি জলের নিচে চলে গিয়েছে। যে সমস্ত কৃষকের ধানের জমি নষ্ট হয়েছে বাংলার শস্য বীমা যোজনার মাধ্যমে সেই সমস্ত কৃষকদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। পাশাপাশি যে সমস্ত সবজি চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের হর্টিকালচার দপ্তরের মাধ্যমে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। নদীর জলে অনেক পুকুর ভেসে গিয়েছে। যার ফলে ক্ষতির মুখে পড়েছেন মৎস্য চাষীরা। তাদের জন্যও ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আগামীকাল ব্লক দপ্তরে এই সমস্ত দপ্তরের আধিকারিকারা আসবেন। তারা সার্ভে করে একটি তালিকা তৈরি করবেন। সেই অনুযায়ী ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়াও প্লাবিত এলাকায় বর্তমানে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছে। আপাতত জেনারেটরের মাধ্যমে সেখানে কিছু জায়গায় বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। যাতে মোবাইল চার্জ সহ অন্যান্য সুবিধাগুলো গ্রামবাসীরা পান। এছাড়াও নলকূপ গুলো ডুবে যাওয়ার জন্য পানীয় জলের একটা সংকট দেখা দিয়েছে। আমরা পাউচ প্যাকেটের মাধ্যমে পানীয় জল সরবরাহ করছি। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দপ্তরকে বলা হয়েছে একটু উঁচু জায়গায় নলকূপ বসিয়ে যাতে পানীয় জলের ব্যবস্থা করা যায়। বাঁধের যে অংশটি ভেঙেছে সেটি মেরামতের জন্য সেচ দপ্তরকে বলা হয়েছে। আগামীকাল থেকে কাজ শুরু করে ৩-৪ দিনের মধ্যে যাতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা যায় তার জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
এদিন জেলাশাসক আরও জানিয়েছেন, বন্যাকবলিত এলাকায় প্রায় তিন হাজার ত্রিপল বিলি করা হয়েছে। দেওয়া হচ্ছে শুকনো খাবার। এদিনও বেশ কিছু ত্রাণ সামগ্রী বিলি করা হয়েছে। রান্না করা খাবারের জন্য দুটি কমিউনিটি কিচেন চালু রয়েছে। সাপের কামড়ের হাত থেকে রক্ষা পেতে হাসপাতালগুলোতে প্রয়োজনীয় অ্যান্টিভেনাম সিরাম মজুত রাখা হয়েছে। সব মিলিয়ে জেলা প্রশাসন এবং ব্লক প্রশাসন পরিস্থিতির দিকে কড়া নজর রেখেছে।