সাগর বাগচী, শিলিগুড়ি: রাতের বেলায় মজা করে শিলিগুড়ি (Siliguri) শহর ঘুরতে ঘুরতে মদ্যপানের অভিজ্ঞতা আইনিভাবে অসম্ভব। কিন্তু এক শ্রেণির টোটো এক্ষেত্রে কিছু মানুষের কাছে ‘মুশকিল আসান’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাতের শহরে ভাড়া করা এই টোটোগুলিই ‘চলন্ত পানশালা’ হয়ে উঠছে। শিলিগুড়ি শহরে কান পাতলে এমন অভিযোগই শোনা যাচ্ছে। এই টোটোগুলি (TOTO) হিলকার্ট রোড, সেবক রোডের মতো নানা এলাকা ঘুরে বেড়াচ্ছে। ঘণ্টা প্রতি ১০০ টাকা থেকে ২০০ টাকায় এই টোটোগুলি ভাড়া করা হচ্ছে। নির্দিষ্ট জায়গা থেকে ‘যাত্রীদের’ ওই টোটোতে তোলা হচ্ছে। শহরের কিছু মানুষ তো বটেই, বাইরে থেকে শহরে আসা এক শ্রেণির মানুষ মদের (Liquor) বোতল, জল নিয়ে টোটোয় উঠে পড়ছে। তারপর মদ খেতে খেতেই টোটোয় করে শহর পরিক্রমা চলছে। সুরাপ্রেমীদের পোয়াবারো।
টোটোচালকদের একাংশ এমন অভিযোগ মেনেও নিয়েছেন। তবে যাঁরা টোটোগুলি মদ্যপানের জন্য ভাড়া দিচ্ছে তাঁদের সংখ্যা কম। শিলিগুড়ি শহরে অগুনতি টোটো চলাচল করে। শিলিগুড়ির আশপাশে বিভিন্ন গ্রাম থেকে অনেকে টোটো নিয়ে এসে শহরে ভাড়া খাটাচ্ছেন। কিন্তু অসাধু উপায়ে টোটোগুলি মদ্যপানের জন্য ভাড়া দেওয়ার ঘটনা অধিকাংশ টোটোচালকই মেনে নিতে পারছেন না। শিলিগুড়ি শহরের প্রথম মহিলা টোটোচালক মুনমুন সরকার ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ করেছেন। তাঁর কথায়, ‘যাঁরা টোটো চালানোর নামে অনৈতিক কাজ করছেন, তার তীব্র বিরোধিতা করছি। প্রশাসনের উচিত এইসব টোটোর ওপর নজর রাখা। ওই টোটোচালকদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা উচিত। পাশাপাশি যারা অসৎ উপায়ে অর্থ উপার্জন করছে, আমরাও তাদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করব।’ ঘটনার বিষয়ে পুলিশ এখনও সেভাবে অবগত নয়। এবিষয়ে ট্রাফিক পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘এমন কিছু হচ্ছে বলে পুলিশের কাছে সেভাবে অভিযোগ আসেনি। তবে পুলিশ রাতেও টোটোতেও নজরদারি চালায়।’
রাতে শহরের গাড়ি কিংবা বাইকে পুলিশের কড়া নজর থাকে। সেক্ষেত্রে গাড়িতে কিংবা দুই চাকার যানে বসে মদ্যপান করলে পুলিশের হাতে ধরা পড়ার আশঙ্কা থেকেই যায়। কেননা পুলিশ ব্রেথ অ্যানালাইজার নিয়ে চার চাকা গাড়ির চালক ও বাইকচালকদের নিঃশ্বাস পরীক্ষা করে দেখে। এজন্যই মদ্যপানের জন্য টোটোগুলিকে বেছে নেওয়া হচ্ছে। একে রাতে টোটোর চলাচলের ওপর কোনও নিয়ন্ত্রণ থাকে না। তার ওপর কেউ টোটোতে বসে কায়দা করে মদ্যপান করে শহর ঘুরে বেড়ালে সেটা সেভাবে নজর করা যায় না।
সূত্রের খবর, শহরের অনেক মানুষ টোটো ভাড়া করছে। এই সুবাদে টোটোচালকদের একাংশের উপার্জন বেশ বেড়েছে। হিলকার্ট রোডের কয়েকজন টোটোচালকের কথায়, ‘শহরের বাসিন্দা এমন অনেকে টোটো ভাড়া করছে। বাইরে থেকে যাঁরা এই শহরে ঘুরতে আসেন, তাঁদের একাংশ মদ্যপানের জন্য টোটো ভাড়া করেন। ঘণ্টা প্রতি ১০০–২০০ টাকার মধ্যে কয়েকজন টোটো ভাড়া দিচ্ছে। কয়েকজনের জন্য সমস্ত টোটোচালকের নাম খারাপ হচ্ছে।’