বাগডোগরা: ক্লাস চলাকালীন পড়ুয়াদের দিয়ে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ পরিষ্কার করানোর অভিযোগ উঠল শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি বাগডোগরার গোঁসাইপুর জিএসএফপি বিদ্যালয়ের। বিভিন্ন শ্রেণির পড়ুয়াদের ঝাঁটা হাতে প্রাঙ্গণ পরিষ্কার করতে দেখা গিয়েছে। আরেক দল প্রাঙ্গণে পড়ে থাকা শুকনো পাতাও ডাস্টবিনে জমা করে অন্যত্র ফেলছিল। বিদ্যালয়েরই এক সহকারী শিক্ষিকার উপস্থিতিতে কাজ করছিল ছাত্রছাত্রীরা। উত্তরবঙ্গ সংবাদের প্রতিনিধিকে ছবি তুলতে দেখেই তড়িঘড়ি পড়ুয়াদের সেখান থেকে সরিয়ে নিয়ে যান ওই শিক্ষিকা।
পড়ুয়াদের ক্লাস না করিয়ে কাজ করালেও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মধ্যে ন্যূনতম দ্বিধাবোধ নেই। উলটে তাঁদের যুক্তি, ‘আমরাও তো ক্লাসরুম মাঝে মাঝে পরিষ্কার করি। ছাত্রছাত্রীরা পরিষ্কার করলে কী সমস্যা?’ গোটা বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। শিলিগুড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের চেয়ারম্যান দিলীপ রায়ের বক্তব্য, ‘বাচ্চাদের দিয়ে তো স্কুল পরিষ্কার করানো ঠিক নয়। তবে কী কারণে করেছে সেটা আমাকে জানতে হবে।’
ঘড়িতে তখন বেলা সাড়ে ১২টা। স্কুলের পাঁচ-ছয়জন পড়ুয়া ঝাঁটা হাতে প্রাঙ্গণ পরিষ্কারে ব্যস্ত। একজন সহকারী শিক্ষিকা দাঁড়িয়ে থেকে কাজের তদারকি করছেন। মূল রাস্তার ওপরেই স্কুল হওয়ায় অন্তত ১০০ মিটার দূর থেকেই বিষয়টি স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। এগিয়ে এসে ছবি তুলতেই সঙ্গে সঙ্গে পড়ুয়াদের সেখান থেকে সরিয়ে দেন শিক্ষিকা। খোঁজ করে জানা যায়, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সমিত কুণ্ডু বাইরে গিয়েছেন। কিন্তু স্কুল চলাকালীন কোন কাজে, কোথায় গিয়েছেন তা বলতে পারেননি শিক্ষক-শিক্ষিকারা। বেশ কিছুক্ষণ তাঁর জন্য অপেক্ষা করা হয়। কিন্তু তাঁর দেখা মেলেনি।
এদিকে, ওই সময় বিদ্যালয়ের এক কর্মী এসে নিজেকে শিক্ষক পরিচয় দিয়ে কেন ছবি তোলা হল জানতে চান। ওই সময়ই আরেক সহকারী শিক্ষিকা এসে হঠাৎ বলতে শুরু করেন, কেন বাচ্চাদের ছবি তুলছেন? পালটা বাচ্চাদের দিয়ে কেন কাজ করানো হচ্ছে প্রশ্ন করতেই শিক্ষিকা কথা ঘোরানোর চেষ্টা করেন। বাচ্চাদের দিয়ে কাজ করানো হচ্ছিল না বলে দাবি করতে থাকেন তিনি। বাচ্চারা কাজ করছে এরকম ছবি রয়েছে বলাতেই তাঁর পালটা যুক্তি, ‘ওরা তো আর বাথরুম পরিষ্কার করছিল না।’
স্থানীয়দের অভিযোগ, সব ক্লাসের পড়ুয়াদের দিয়েই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে প্রাঙ্গণ পরিষ্কার করানো হয়। স্কুলে বাচ্চাদের দিয়ে এভাবে কাজ করানো একদম উচিত নয় বলে মনে করছেন তাঁরাও। স্থানীয় বাসিন্দা অরিন্দম শীলের বক্তব্য, ‘বাচ্চাদের স্কুলে পড়াশোনা করতে পাঠানো হয়। কাজ করতে হলে তো বাড়িতেই করতে পারে। স্কুলে যাওয়ার কী প্রয়োজন!’ আরেক বাসিন্দা প্রাক্তন সেনাকর্মী শুভব্রত সরকারের বক্তব্য, ‘মাঝে মাঝেই বাচ্চাদের স্কুলে পরিষ্কার করার কাজ করানো হয়। এরকম কোনও নিয়ম আছে নাকি?’